আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে পারে। এসময় ১৬ লাখ শিশু চরম অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকবে। দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাশিবিরের মানুষও এ সংকটে পড়তে পারে। এ তথ্য জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) এবং জাতিসংঘের তিন সংস্থা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), শিশু তহবিল (UNICEF) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) যৌথভাবে ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (IPC) প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের শেষ আট মাসে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তবে গত বছরের তুলনায় সামগ্রিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত।
প্রধান অতিথি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘IPC প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি না, তবে সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কমানো হচ্ছে। মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণ করা জেলার ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে থাকতে পারে। এর প্রাথমিক কারণ হলো অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু বিপর্যয়, তহবিলের অভাব, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং খাদ্য বৈচিত্র্যের ঘাটতি।’
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন FAO ও WFP-এর ফুড সিকিউরিটি ক্লাস্টার সমন্বয়কারী মো. মঈনুল হোসেন রনি এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের নিউট্রিশন ক্লাস্টার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন। সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (মানবকল্যাণ) মোস্তাক হোসেন আইপিসি প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে দেশের খাদ্যঘাটতি, অপুষ্টি ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে পাঁচটি ধাপে মূল্যায়ন করা হয়েছে—
১. ধাপ ১ : স্বাভাবিক,
২. ধাপ ২ : চাপে থাকা,
৩. ধাপ ৩ : সংকটে থাকা,
৪. ধাপ ৪ : জরুরি অবস্থা,
৫. ধাপ ৫ : দুর্ভিক্ষ।
দেশের ৩৬ জেলায় ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ বছর কোনো জেলায় ধাপ ৫ বা দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি এবং আশা করা হচ্ছে এমন পরিস্থিতি হবে না।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩৬টি জেলার মধ্যে ১৬টি জেলার ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ ধাপ ৩-এ বা সংকটের মধ্যে ছিল। মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩টি জেলার ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হবে। জেলাগুলো হলো বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ও স্থানীয় মানুষ উভয়ই সংকটে পড়বে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন হবে। রোহিঙ্গা শিবিরসহ কক্সবাজারের মানুষের ৪০ শতাংশ ডিসেম্বরের মধ্যে জরুরি অবস্থায় থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কিছুটা কমে ধাপ ২-এ উন্নীত হয়েছে। তবে বাগেরহাট এবার ধাপ ৩-এ পৌঁছেছে। খাদ্যসংকটের এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙনসহ অন্যান্য দুর্যোগ।

