সরকার অবসরে যাওয়া ২০ জন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। প্রশাসনকে গতিশীল করার উদ্দেশ্যেই নেওয়া এই উদ্যোগটি কার্যত প্রশাসনকে আরো এলোমেলো করে তুলেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। নিয়মিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক সচিবদের মানসিক সমন্বয়ের অভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
নতুন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এই ২০ কর্মকর্তার সঙ্গে বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ৭১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিয়োগগুলো হল—ড. শেখ আব্দুর রশীদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব (সিনিয়র সচিব), ড. নাসিমুল গনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ড. মো. মোখলেস উর রহমান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা), মমতাজ আহমেদ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (এনডিসি), মো. এহসানুল হক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, আখতার হোসেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব এবং ড. মো. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়াকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া হয়েছে। যেমন—ড. মো. মাহফুজুল হক পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব পদমর্যাদা) এবং বেগম শরিফা খান বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘ সময় প্রশাসনের বাইরে থাকা এসব চুক্তিভিত্তিক সচিব ও সিনিয়র সচিব স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে মানিয়ে নিতে পারছেন না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিয়মিত কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক ট্যাগিং, ক্ষমতাপ্রত্যাশী দুই দলের সমর্থক কর্মকর্তাদের প্রভাব এবং শূন্য পদে নিয়োগ না দেওয়ার সমস্যা। ফলে প্রশাসনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড থেমে গেছে।
অনেক মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব পদ শূন্য রয়েছে। যথাযথ কর্মকর্তার অভাবে গুরুত্বপূর্ণ উইং ও অনুবিভাগের পদও শূন্য রয়েছে। ২০ ব্যাচের যুগ্ম সচিবদের পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখন তা স্থগিত। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএসবি বৈঠকে ৩০ থেকে ৩৫ কর্মকর্তার পদোন্নতির সুপারিশ করা হলেও কার্যকর হয়নি।
কিছু কর্মকর্তার অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বার্থান্বেষী লবিংয়ের কারণে প্রশাসনের পদায়ন অসংগঠিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতা প্রদর্শনের কারণে সচিবালয়ের পরিবেশ অস্থির। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিগুরুত্বপূর্ণ এপিডি (অতিরিক্ত সচিব) পদ শূন্য থেকে দীর্ঘদিন এবং সরকারি প্রভাবশালী উপদেষ্টার নির্দেশ সত্ত্বেও খুলনার সাবেক বিভাগীয় কমিশনারকে পদায়ন করা যায়নি।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় কর্মকর্তাদের মধ্যে বদলি-আতঙ্ক বেড়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ পদ থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত ব্যাপক রদবদলের সম্ভাবনা কর্মকর্তাদের কাজের গতিকে প্রভাবিত করছে। ২৪তম ব্যাচের ডিসিদের প্রত্যাহার ও নতুন নিয়োগ নির্বাচন পরবর্তী পরিকল্পনায় স্থগিত রাখা হতে পারে।
তবে রাজনৈতিক প্রভাব ও সমন্বয়হীনতার কারণে কর্মকর্তারা প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করতে নিরাপদ মনে করছেন না। এক কর্মকর্তা জানান, “সরকারি গাড়ি ব্যবহার করলেও সারাক্ষণ উত্তেজনা কাজ করে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও পরিচয় গোপন রাখা ছাড়া নিরাপদ থাকা যায় না।”

