শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া কার্গো কমপ্লেক্সের স্ট্রংরুম থেকে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চুরি হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলা হয়নি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) হিসেবে পরিচিত বিমানবন্দরের সুরক্ষিত অংশ থেকে এমন চুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম জানান, ‘স্ট্রংরুমের ভল্টের তালা ভাঙা পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ২৮ অক্টোবর একটি জিডি করেছে। বিষয়টি এখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দেখছে।’
বিমানবন্দর ও কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চুরি হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এম৪ কারবাইন রাইফেল এবং ব্রাজিলের টরাস কোম্পানির তৈরি সেমি-অটোমেটিক পিস্তল। তবে ঠিক কতটি অস্ত্র চুরি হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
গত ১৮ অক্টোবর কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে আগুন লেগে বহু মালপত্র পুড়ে যায়। তবে স্ট্রংরুমের ভল্ট মূলত অক্ষত ছিল এবং পরে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে সিলগালা করা হয়েছিল। সেখানে মূল্যবান পণ্য, শুল্ক নথি, স্বর্ণ, হীরা ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ছিল।
২৪ অক্টোবর বিকেলে বিমান, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদল ভল্ট পরিদর্শন করে। ওই সময় তারা ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র দেখেন, যার মধ্যে ছিল এম৪ কারবাইন ও টরাস পিস্তল। তবে অস্ত্রগুলোর আমদানিকারক নিশ্চিত নয়।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ভল্টের তালা পরীক্ষা করেন। কিন্তু পরের দিন সকাল ৭টার দিকে জানতে পারেন তালা নেই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তালা খোলা এবং ভল্টের দরজা উন্মুক্ত। তালা কাটার সরঞ্জামসহ আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক টিম।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গেটের বাইরের নিরাপত্তা দেখি, ভেতরের পরিস্থিতি বলতে পারি না। আগুনে সব সিসিটিভি পুড়ে গেছে এবং পরে কোনো ক্যামেরা বসানো হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
বিমান চলাচল বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘ঘটনার দায় এড়াতে পারে না সিভিল এভিয়েশন এবং বিমান কর্তৃপক্ষ। আগুনে কাগজ পুড়ে গেলেও অস্ত্রের তালিকা বের করা সম্ভব। যেখানে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকার কথা, সেখানে এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘অস্ত্র চুরি হয়েছে কি না, তা তদন্তের পর বলা যাবে। যদি হয়ে থাকে, দায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

