চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সারোয়ার হোসেন বাবলা ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে নগরীর অপরাধজগতে সক্রিয় এই বাবলা রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন মাত্র কয়েক মাস আগে।
একসময় ‘এইট মার্ডার’ মামলার আসামি ও সাজ্জাদ হোসেন খানের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন বাবলা। পরবর্তীতে গুরু সাজ্জাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে নিজস্ব দল গঠন করেন। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে একাধিকবার প্রাণঘাতী হামলার শিকার হলেও প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু বুধবারের (৫ নভেম্বর) ঘটনায় আর ভাগ্য সহায় হয়নি—পিঠে ঠেকানো পিস্তলের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান বাবলা।
পুলিশ জানায়, বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে সম্প্রতি রাজনৈতিক মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিলেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই কুখ্যাত মুখ। এর আগেই সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে বাবলা ও তাঁর সহযোগী নুরুন্নবী ম্যাক্সন চট্টগ্রামের অপরাধজগতে আধিপত্য বিস্তার করেন। ২০১১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল থেকে ম্যাক্সন গ্রেপ্তার হন এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বায়েজিদ এলাকা থেকে বাবলাকে আটক করা হয়।
তখন তাদের কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি, দুটি ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। ২০১৭ সালে জামিনে বের হয়ে দুজনই কাতারে পালিয়ে যান। সেখানে মারামারির ঘটনায় সাজা ভোগের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাবলাকে ফেরত পাঠায় কাতার পুলিশ। দেশে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হয়ে আবারো কারাগারে যান তিনি।
চার বছর কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়ে নতুন মোড় নেন বাবলার জীবন। কারাগারে থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়, যা পরে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঙ্গেও বিস্তৃত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই বিএনপির সভা-সমাবেশে নিয়মিত দেখা যেতে থাকে বাবলাকে।
মাত্র এক মাস আগে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই বুধবার বিকেলে এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে যোগ দেন তিনি—যেখানে শেষ হয় তাঁর জীবন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হামলার টার্গেট ছিলেন বাবলা, প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ নয়। বাবলাকে নিশ্চিহ্ন করতে এই গুলি চালানো হয়।” তিনি আরো বলেন, “এটা বাবলার নিজ এলাকা। বাইরে থেকে আসা সন্ত্রাসীরাই হামলা চালিয়েছে। নির্বাচনের আগে এটি অত্যন্ত অশুভ সূচনা।”
সিএমপি কমিশনার সব রাজনৈতিক দলকে প্রচারণা শুরুর আগে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। প্রার্থীর প্রচারণায় শত শত মানুষ ছিলেন। সরোয়ার সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তবে এটি দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পূর্ববিরোধের জের।”

