টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতি এবং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যদি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করেন, তাহলে তাঁরা অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৯৯ (নিরান্নব্বই) কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এই বিধানগুলো রাখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ খসড়ায়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বুধবার এই খসড়া প্রকাশ করেছে। খসড়াটি সাধারণ নাগরিক এবং অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য বিভাগের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশের ৬৬ক ধারায় বলা হয়েছে— ‘টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতি এবং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যদি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করে, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করে—যাহা সহিংসতা সৃষ্টি করে বা বিশৃঙ্খলা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা প্রদান করে, অথবা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ-এর সুযোগ তৈরি করে, অথবা কৌশলগত ফাইবার নেটওয়ার্ক, ডেটা সেন্টার, লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা কোম্পানির সার্ভার সিস্টেম ব্যাহত করে বা হ্যাকিং (অবৈধ অনুপ্রবেশ) করে বা ক্ষতিসাধন করে যাহা দেশের অর্থনীতি বা আর্থিক স্বার্থে ক্ষতি করে।
অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে যেকোনো ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গে ব্যাঘাত ঘটায় যেকোনো স্যাটেলাইট যোগাযোগ, এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা, বিমান যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, স্থল ও নৌ যোগাযোগসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা বা জিপিএস ব্যবস্থা, নেভিগেশন প্রতিহত করে, অথবা রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ভুয়া জিও লোকেশন ও নেভিগেশন সংকেত প্রেরণ করে, অথবা অর্থনীতির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে বাল্ক এসএমএস প্রতারণা, বাল্ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কল প্রতারণা বা সমন্বিত পরিচয়গত উপাত্ত প্রতারণা করে, অথবা লক্ষ্যভিত্তিক তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ দূষণ তৈরি করে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে, তাহা হলে উক্ত কাজটি অপরাধ গণ্য হবে এবং অপরাধী অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৯৯ (নিরান্নব্বই) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’
এছাড়া বলা হয়েছে— ‘যদি কোনো টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত অপরাধের বিপরীতে কমিশনের নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে না পালন করে, তাহা হলে উহাও একটি অপরাধ হবে এবং উক্ত টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর বা অনধিক ৯৯ (নিরান্নব্বই) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিবে। যদি এ ধারার বিষয় যেমন অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ প্রচেষ্টা ইত্যাদি বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, তাহার বিষয়ে আদালতের ব্যাখ্যা প্রণিধানযোগ্য হবে।’
ধারা ৬৯ (ক) অনুযায়ী— ‘কোনো ব্যক্তি টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কোনো অশ্লীল, ভীতি প্রদর্শনমূলক বা গুরুতরভাবে অপমানজনক বার্তা প্রেরণের উদ্দেশ্যে যন্ত্রপাতি পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তির নিকট প্রস্তাব করেন, অথবা সেই প্রস্তাব অনুযায়ী দ্বিতীয় ব্যক্তি সজ্ঞানে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বার্তা প্রেরণ করেন, বা চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে অন্য ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নিকট অশ্লীল, গুরুতরভাবে অপমানজনক, হুমকিমূলক বা ভীতিকর বার্তা/কথোপকথন/ছবি/ছায়াছবি প্রেরণ করেন, তাহা হলে—
দফা (ক) অনুযায়ী প্রস্তাবকারী, দফা (খ) অনুযায়ী প্রস্তাবকারী ও প্রেরণকারী, দফা (গ) অনুযায়ী প্রেরণকারী দোষী হবেন। এ ক্ষেত্রে—
• দফা (ক) ও (খ)-এর জন্য অনধিক ২ (দুই) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১.৫ (দেড়) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
• দফা (গ)-এর জন্য অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে এবং অনাদায়ে ৩ (তিন) মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাইবার সুরক্ষা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে।
ধারা ৭০-এ বলা হয়েছে— ‘কোনো ব্যক্তি যদি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অন্য ব্যক্তির নিকট বারবার টেলিফোন করে, যার ফলে উক্ত ব্যক্তি বিরক্ত বা অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তাহা হলে উক্ত কার্য অপরাধ হবে। দোষী ব্যক্তি অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে এবং অনাদায়ে অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’
অধ্যাদেশের বিষয়ে মতামত পাঠানো যাবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ই-মেইলে—secretary@ptd.gov.bd, অথবা ডাকযোগে: সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

