COP30 সম্মেলনকে সামনে রেখে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো “Fair Finance Now: Bangladesh’s Call Before COP30” শীর্ষক এক যুব নেতৃত্বাধীন ক্যাম্পেইন। এতে তরুণরা বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং টেকসই জলবায়ু অর্থায়নের দাবি জানান।
বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জিডিপির প্রায় ১–২ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়ছে। জলবায়ু অভিযোজন ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়নের জন্য বছরে প্রয়োজন প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার ৮৫–৯০ শতাংশ অর্থায়নের ঘাটতি রয়ে গেছে। বর্তমানে দেশটি প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ১১ শতাংশ পেয়ে থাকে।
যুব নেতারা জানান, ন্যায্য ও টেকসই অর্থায়ন কাঠামো না থাকলে জলবায়ু অভিযোজনের ভার পড়ে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর। তাদের মতে, জলবায়ু অর্থায়ন কোনো দান নয়, বরং এটি ন্যায্যতার দাবি।
পার্টনারশিপের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (PRAAN) প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মোসালে উদ্দিন সুজন বলেন, “জলবায়ু অর্থায়ন কোনো অনুদান নয়—এটি ন্যায্যতার প্রশ্ন। যে সংকট বাংলাদেশের তৈরি নয়, তার অর্থনৈতিক বোঝা আমাদের বহন করা অন্যায়।”
ক্যাম্পেইনের মূল আহ্বানে তরুণদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—
- বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (BCCTF) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন রিফাইন্যান্সিং স্কিমের আওতায় “ইয়ুথ ক্লাইমেট ইনোভেশন অ্যান্ড ফাইন্যান্স উইন্ডো” গঠন।
- জাতীয় জলবায়ু বাজেটের অন্তত ৫ শতাংশ যুব নেতৃত্বাধীন সবুজ উদ্যোগ, গবেষণা ও স্থানীয় অভিযোজনে বরাদ্দ।
- ক্লাইমেট ফিন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক, গ্যাস ট্র্যাকার কমিটি ও বাংলাদেশ ক্লাইমেট প্রোফাইলিং জ্ঞানের বাস্তবায়ন কাঠামোর প্রতিটি স্তরে যুব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ।
- জাতীয় পাঠ্যক্রমে জলবায়ু অর্থায়ন ও সবুজ উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত করা।
বৈশ্বিক পরিসরে তরুণদের দাবি ছিল—
- আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ যুব নেতৃত্বাধীন সমাধান ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিরোধ প্রকল্পে বরাদ্দ।
- তরুণদের জলবায়ু সমাধানের সহ-বিনিয়োগকারী হিসেবে স্বীকৃতি।
- বৈশ্বিক অর্থায়ন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করা।
- লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড (FKLF)-এর আওতায় একটি ‘ইয়ুথ উইন্ডো’ গঠন, যাতে তরুণরা উদ্ভাবন ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সরাসরি অবদান রাখতে পারে।
“আমরা চাই এমন অর্থায়ন, যা জীবন টিকিয়ে রাখে, বৈষম্য নয়”—এই মূল স্লোগানকে সামনে রেখে ক্যাম্পেইনে অনুষ্ঠিত হয় জনসচেতনতামূলক প্রদর্শনী ও মাইম পরিবেশনা। অংশগ্রহণকারীরা প্ল্যাকার্ড ও স্লোগানের মাধ্যমে টেকসই অর্থায়ন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু সহনশীলতার পক্ষে সচেতনতা তৈরি করেন।
আয়োজনটি পরিচালনা করে ফেয়ার ফাইন্যান্স বাংলাদেশ কোয়ালিশন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, পার্টনারশিপের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (PRAAN) এবং ডেমোক্রেটিক বাজেট মুভমেন্ট। সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিল প্রচেষ্টা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন, সৌম্যদী ইয়ুথ ফাউন্ডেশন, আমরাই আগামী এবং শান্তন মাইম একাডেমি।
প্রোগ্রামের শেষে তরুণরা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, আর্থিক খাত ও সিভিল সোসাইটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান, যাতে বাংলাদেশ একটি সক্ষম, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জলবায়ু-সহনশীল অর্থনীতির পথে অগ্রসর হতে পারে।

