রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় সাড়ে আট মাস আলোচনার টেবিলে বসে থাকলেও নভেম্বরের শুরুতে আবার রাজপথে নেমেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ঘিরে চলা সংস্কার প্রক্রিয়া, পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য সংসদ নির্বাচন—এই দুই কারণে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিএনপি, জামায়াতসহ শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি শুরু করেছে, যা নির্বাচনের প্রস্তুতি নাকি রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার ইঙ্গিত, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, কার্যক্রম–নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগও ১৩ নভেম্বর ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি চালানোর পরিকল্পনা করছে।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী। ১১ নভেম্বর জামায়াতসহ আটটি ইসলামপন্থী দল ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। তারা দাবি করছে—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী নভেম্বরে গণভোট আয়োজন করা হোক এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে উচ্চকক্ষে বা উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু হোক।
সাড়ে আট মাসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে জুলাই সনদ প্রণয়ন করেছে। অধিকাংশ দল এতে সই করলেও- সংস্কার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হতে পারেনি।

অন্যদিকে, বিএনপি গণভোট ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনেই করার পক্ষে। দলটি ইতিমধ্যে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করেছে। এসব কর্মসূচিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শিত হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে বিএনপি, জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচিত। বিএনপি ও জামায়াত মাঠে সক্রিয় হলেও এনসিপি এখনও তেমন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, বিএনপি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে না। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিগত রেজিম সব সময় এই ধরনের পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকত’।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, জুলাই সনদের বিষয়টি জাতীয়। তাই জামায়াতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে বসা সমীচীন হবে না। বরং সরকার ডাকলে বিএনপি অংশ নেবে। বিএনপি চাইছে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হোক, আর জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো চাইছে গণভোট আগে অনুষ্ঠিত হোক। নভেম্বর মাসে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা এই দ্বন্দ্বকে আরো দৃশ্যমান করছে।

বিএনপি ও জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো—খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নেজামে ইসলাম পার্টি, ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন—রাজপথে সক্রিয়। ৭ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশের পর ১১ নভেম্বর জামায়াতের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। কার্যক্রম–নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগও ১৩ নভেম্বর ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি চালানোর পরিকল্পনা করছে।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় রাজনৈতিকভাবে ব্যস্ত ও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। দলগুলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে একযোগে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে, কারণ সংঘর্ষ বা সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের দাবি পূরণের জন্য এবং আওয়ামী লীগের অবস্থানের সুযোগ সীমিত করার জন্য রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করতে চাইবে। দলগুলো যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, সরকারকে সংস্কার বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এই পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে।

