আগে গ্রাম-গঞ্জের মাঠ, ঝোপ-জঙ্গল ছিল সাপের প্রধান আবাসস্থল। কিন্তু সম্প্রতি রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় শঙ্খ গোখরা, খোয়া গোখরা, রাসেল ভাইপারসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ দেখা যাচ্ছে। কখনো ঘরের ভিতরে, কখনো গাড়ির পার্কিং, প্লে-গ্রাউন্ড, আবার কখনো ৯-১০ তলা ভবনের বাসা ও ছাদেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, কাফরুল, মিরপুর, খিলগাঁওসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত সাপ দেখার সাক্ষী হচ্ছেন।
শ্রাবণ বিশ্বাস, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের কপোতাক্ষ ভবনের বাসিন্দা, বলেন, “সাপ এখন আমাদের নিত্যদিনের বিষয়। গাড়ির পার্কিংয়ে ঢুকলেই সাপ দেখা যাচ্ছে। আমরা অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ারকে খবর দিলে তারা এসে সাপ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। শুধু পার্কিং নয়, ৯-১০ তলার ফ্ল্যাটেও সাপ উঠে যাচ্ছে।”
খিলগাঁওয়ের একটি ফ্লোর ভাঙে দুইটি বিষধর গোখরা, সাতটি বাচ্চা এবং ১৮টি সাপের ডিম উদ্ধার করা হয়েছে। বাসিন্দারা ভয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান। মিরাজ হোসেন বলেন, “আমাদের মতো জনবহুল এলাকায় এমন বিষধর সাপের উপস্থিতি ভাবতেও ভয়ঙ্কর। কয়েকদিন আগে পাশের বাসা থেকে নয়টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে, সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ডিমও ছিল।”
বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ জানান, গত চার মাসে শুধুমাত্র ঢাকা শহর থেকে ৩৫১টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি বাদে সবই পদ্মগোখরা, রাসেল ভাইপার, খৈয়া গোখরা এবং রাজ কেউটের মতো মারাত্মক বিষধর। তিনি বলেন, “উচ্চ ভবন থেকে উদ্ধার করা সাপগুলো সাধারণত আশেপাশের গাছ বেয়ে উপরে উঠে আসে। বর্ষাকালে পানি ও খাবারের সহজলভ্যতার কারণে তারা শহরের আবাসিক এলাকায় আসে।”
বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্ষাকাল ও প্রজননকাল (আগস্ট থেকে নভেম্বর) সাপের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটায়। এছাড়া অপ্রণালিবদ্ধ নগরায়ণ, জলাশয়, ঝোপঝাড়, ফ্ল্যাটের ইঁদুর এবং ছিটিয়ে রাখা খাবারও সাপের আগমন বাড়ায়।
নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ
-
বাড়ির আশেপাশ পরিষ্কার রাখা
-
আবর্জনা ও খাবার বাইরে না ফেলা
-
সাপ দেখা গেলে আতঙ্কিত না হয়ে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ারকে খবর দেওয়া
বাংলাদেশ বনবিভাগের ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহ আস সাদিক জানান, “ঢাকায় সাপের আনুষ্ঠানিক উপদ্রব সংক্রান্ত তথ্য আমাদের কাছে নেই। উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালিত সংগঠনগুলো আমাদের অনুমোদন ছাড়াই কাজ করছে। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো।”
সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা ও অ্যান্টিভেনম
রাজধানীর সব হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম নেই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ডে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে। অন্য হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম নেই বা সীমিত, তবে ফার্মেসিতে পাওয়া যায়।
ডা. মফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, “আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে এবং সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা করা হয়।”
রাজধানীর বসবাসযোগ্য এলাকায় বিষধর সাপের উপস্থিতি বাড়ার ফলে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও সতর্কতা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নগরবাসীকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে মানুষ ও সাপের সহাবস্থান সম্ভব হয় এবং দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

