জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নতুন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। তাদের তথ্য বলছে, কিছু মহল নির্বাচনের আগে বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করতে পারে। উদ্দেশ্য—ভোটারদের বিভ্রান্ত করা ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে জাল টাকা প্রবেশের খবর পাওয়ার পর থেকেই সতর্ক হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও সীমান্ত নিরাপত্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), বিজিবি এবং অন্যান্য সংস্থা এখন যৌথভাবে কাজ করছে এই ঝুঁকি ঠেকাতে।
১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিবৃতিতে নাগরিকদের নগদ লেনদেনে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার আহ্বান জানায়। তারা পরামর্শ দিয়েছে—
নোট গ্রহণের সময় জলছাপ, নিরাপত্তা সুতা, অসমতল ছাপা, রং পরিবর্তনশীল কালি ও ক্ষুদ্র লেখাগুলো ভালোভাবে যাচাই করতে।
এছাড়া বড় অঙ্কের লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করার অনুরোধ জানানো হয়। সন্দেহজনক নোট পেলে পুলিশ বা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
জাল নোটের সম্ভাব্য প্রবেশপথ হিসেবে চিহ্নিত দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।
জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল লতিফুল বারী জানান,
“সীমান্তের চেকপোস্টগুলোতে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদেরও তল্লাশি করা হচ্ছে।”
৬ নভেম্বর ময়মনসিংহে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরদার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকায় জাল নোটের উৎস অনুসন্ধানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যেও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ চলছে।
দেশের ভেতরেও জাল নোটের সক্রিয় চক্র কাজ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শেরপুরের নালিতাবাড়ীর আমবাগান বাজার এলাকা থেকে ৮ অক্টোবর রাতে ২১টি এক হাজার টাকার জাল নোটসহ মেহেদী হাসান নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়,
“নোটগুলো এতটাই নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে খালি চোখে পার্থক্য করা প্রায় অসম্ভব।”
ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্তের পাশের বাজারগুলোতে এই নোটগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এর আগেও কয়েকটি ঘটনায় ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে জাল নোট ধরা পড়ে।
১৩ অক্টোবর এক বৃদ্ধা যখন তিন লাখ টাকা জমা দিতে যান, ব্যাংক কর্মকর্তারা সেখানে ৫৩টি জাল ১০০ টাকার নোট পান।
এর দুই দিন আগে, ১১ অক্টোবর নুহু নামে এক ব্যক্তি সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গেলে ধরা পড়ে ২৫টি জাল এক হাজার টাকার নোট।
বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) এএইচএম শাহাদাত হোসাইন বলেন,
“জাল টাকা প্রতিরোধে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। সীমান্ত, ব্যাংক ও বাজারে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে—খুচরা লেনদেনে অপরিচিত বা সন্দেহজনক নোট ব্যবহার না করাই এখন সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।

