বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আসছে প্রবাসী ভোটার অ্যাপ ‘পোস্টাল ভোট বিডি’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিরা এই অ্যাপের মাধ্যমে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থায় প্রবাসী ভোটার, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা এবং আইন হেফাজতে থাকা ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। প্রাথমিক হিসাবে ১০ লাখ ভোটার এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন আজ এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবে।
বিশ্বের ১৭৮ দেশের মধ্যে ১১৫টি গণতান্ত্রিক দেশে প্রবাসীরা কীভাবে ভোট দেয় তা বিবেচনা করে বাংলাদেশে পোস্টাল ভোট পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইসির সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ২০ হাজার ৬৭৬ জন বাংলাদেশিকে ইতোমধ্যেই ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। মোট আবেদন জমা পড়েছে ৬১ হাজার ১১৯টি। এর মধ্যে দূতাবাসে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৯০ জনের। তদন্ত শেষ হয়ে অনুমোদন পেয়েছে ২৫ হাজার ৭১১টি আবেদন। অপেক্ষায় আছে ১ হাজার ৩৬টি। বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ১৩৬টি আবেদন। আরও ২৯ হাজার ২৪৭টি আবেদন তদন্তাধীন আছে।
ইসির সার্ভারে আপলোড করা হয়েছে ২০ হাজার ৬৭৬ জনের তথ্য। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৩১টি এনআইডি ছাপানো হয়েছে এবং এগুলো সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১১টি দেশের ২১টি স্টেশনে এই কার্যক্রম চলছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ স্বাক্ষরিত ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন’ প্রকল্পের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন হবে ১৮ নভেম্বর। উদ্বোধনের পর চার সপ্তাহ চলবে নিবন্ধন। এ সময়ের মধ্যে যারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে চান তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, প্রবাসী ভোটার, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এবং আইন হেফাজতে থাকা ভোটারদের জন্য পোস্টাল ভোটিং আইন ও বিধি এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে পুরো প্রক্রিয়া আইনি জটিলতা মুক্ত থাকে। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ও বিদেশে অ্যাপটির প্রচারণা চালানো হবে। ১৬ নভেম্বরের মধ্যে অ্যাপের যাচাই-বাছাই ও টেস্ট শেষ করে স্থিতিশীল সংস্করণ প্রকাশ হবে। একই দিনে ইসিতে নিবন্ধন প্রদর্শন কার্যক্রমও শুরু হবে। ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হবে নিরাপত্তা যাচাইসহ পোস্টাল ব্যালটের পার্সোনালাইজেশন। ডিসেম্বরের ১ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে বিদেশে ব্যালট পাঠানো হবে। আগামী বছরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে বিদেশ থেকে ব্যালট ফেরত আসা শুরু হতে পারে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে ব্যালট পৌঁছে দেওয়া হবে।
পোস্টাল ভোট বিডির বাজেট নিয়েও তথ্য পাওয়া গেছে। নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ লাখ ধরা হলে এর জন্য নির্বাচনি বাজেটে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। প্রকল্পে এই বাজেট না থাকায় নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখাকে দ্রুত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ লাখ প্রবাসী ও অভ্যন্তরীণ ভোটারকে বিবেচনায় নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। নিবন্ধনের অগ্রগতি দেখে ধীরে ধীরে পরবর্তী ধাপের ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া পোস্টাল ব্যালটের কিউআর কোড স্ক্যানের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবহারের উপযোগী ১৪০টি কিউআর কোড রিডার কেনা হবে।

