সামাজিক মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা ও ব্যঙ্গের মধ্যেই তার অর্জন তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অনেকে সরকারের কাজকর্মকে ‘নামে সরকার, আসলে এক প্রকার এনজিও-গ্রাম’ বলে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রাস্তাঘাটে নিয়ন্ত্রণহীনতা, ধীরগতি আইন প্রণয়ন এবং ছোট গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকার—এসব অভিযোগও উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সামাজিক মাধ্যমে পোস্টে শফিকুল আলম বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেকেই দুর্বল মনে করেন। ৫০০ দিনে ১৭০০টির বেশি বিক্ষোভ ঘটেছে। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগেও তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তবে এসবের পরও এটি গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি।”
প্রেস সচিব অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো ব্যাখ্যা করেন:
- শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ হয়েছে।
- মার্কিন শুল্ক চুক্তি কোনো লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই সম্পন্ন হয়েছে।
- মাত্র ১৫ মাসে রেকর্ড সংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও অন্তর্ভুক্ত।
- জুলাই ঘোষণা ও জুলাই চার্টার নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ও সমঝোতা তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুনর্গঠন করতে পারে।
- সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছে, ফলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামিন বা মামলা ব্যবহার করা কঠিন হবে।
- লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের শিল্প রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
- নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে নিয়ে এসেছে।
- অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে, পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে এসেছে।
- ব্যাংকিং খাতে লুটপাট রোধ করা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে; খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে নেমে ৭ শতাংশে এসেছে।
- অতীতের নিপীড়নের জন্য আদালত কার্যক্রমে জবাবদিহিতা শুরু হয়েছে।
- গুম বন্ধ হয়েছে, চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে, সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এসেছে।
- র্যাব আইনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে।
- গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে; গত ১৬ মাসে কোনো সাজানো ‘ক্রসফায়ার’ ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
শেষে তিনি লেখেন, “অন্তর্বর্তী সরকার এই পনেরো মাসে যা কিছু অর্জন করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে খুব কম কোনো সরকার এত দ্রুত এত কিছু করতে পেরেছে।”

