বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রেজওয়ান আলী মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে যান, যদিও এই সফরের সঙ্গে তার বর্তমান দায়িত্বের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। তিনি নিজেও এ তথ্য স্বীকার করেছেন। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের কারণে কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রকল্পের খরচে বিদেশ সফরের দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার বিদেশ সফর সীমিত করার চার দফা নির্দেশনা জারি করলেও কীভাবে রেজওয়ান আলীর সফর অনুমোদিত হলো। রেজওয়ান আলী জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষই মনে করেছে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
মালয়েশিয়া সফরে হাইটেক পার্কের ১৫ জন কর্মকর্তা ও শিক্ষক অংশ নেন, যার মধ্যে প্রকল্প পরিচালক, আইসিটি বিভাগের উপসচিব ও হাইটেক পার্কের পরিচালকও ছিলেন। তারা ‘নলেজ শেয়ারিং ওয়ার্কশপ ফর ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাব ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণ করেন। সরকার কোনো অর্থ খরচ করছেনা।
আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “প্রয়োজনীয় সফর হচ্ছে, তবে বিষয় সংক্রান্ত নয় এমন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি খতিয়ে দেখা হবে।”
তবে সত্যিই সরকারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে অন্তত ২৩ জন আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তা ও অধীন সংস্থার কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের আদেশ জারি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার চারবার বিদেশ সফর কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এটি কার্যকর হয়নি।
অতীতে বিদেশ সফরের প্রবণতা সব সরকারের আমলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “সরকার সর্বদা নিরুৎসাহিত করার নির্দেশ দেন, তবু সফর কমেনি।”
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ঠিকাদার বা আয়োজক প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করলে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করতে পারবেন না। জাতীয় স্বার্থে একান্ত অপরিহার্য হলে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপদেষ্টা একসাথে সফর সাধারণত পরিহার করবেন।
আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, কোরিয়া ও কম্বোডিয়ায় নানা আয়োজনে সফর করছেন। উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডসে স্টার্টআপ বুটক্যাম্পে হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নামে ভ্রমণ আদেশ জারি হয়।
এছাড়া সিঙ্গাপুর ও কাতারে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, কোরিয়ায় টেকনোলজি কমার্শিয়ালাইজেশন ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে সফর হয়েছে।
বিদেশ সফরের এই প্রবণতা সরকারের সীমিত করার নির্দেশনার সঙ্গে বিপরীতমুখী। এতে প্রশ্ন ওঠে, সরকারি নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগ কতটুকু হচ্ছে।

