বড় কোনো ভূমিকম্প বা দুর্যোগ মুহূর্তেই আমাদের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ শুরু হতে সময় লাগতেই পারে—কখনো ২৪ ঘণ্টা, কখনো ৭২ ঘণ্টা, আবার কখনো দুই সপ্তাহ পর্যন্তও সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। তাই আগেভাগে নিজের নিরাপত্তার জন্য একটি জরুরি কিট প্রস্তুত রাখা আর দায়িত্ব নয়—এখন তা প্রয়োজনীয় অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা) স্পষ্ট জানাচ্ছে—দুর্যোগের পর প্রথম ৩ দিনই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এ সময় আপনাকে নিজে এবং পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য ঘর, কর্মস্থল, এমনকি গাড়িতেও জরুরি কিট থাকা অত্যন্ত জরুরি।
জরুরি কিটে কী কী থাকা অপরিহার্য?
১. খাবার ও পানি
দুর্যোগের সময় খাবার ও পানি পাওয়া সবচেয়ে কঠিন হয়ে যায়। তাই—
-
প্রতিজনের জন্য প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার পানি রাখার পরামর্শ দিচ্ছে ফেমা।
-
শিশু, স্তন্যদানকারী মা বা অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বাড়তি পানির ব্যবস্থা রাখা উচিত।
-
খাওয়ার জন্য এমন খাবার বেছে নিন যা সহজে নষ্ট হয় না, রেফ্রিজারেশন লাগবে না এবং রান্নার প্রয়োজন নেই।
-
শিশু বা যাদের বিশেষ খাদ্য প্রয়োজন, তাদের জন্য আলাদা খাবার সংরক্ষণ করতে হবে।
পানি বিশুদ্ধ করতে না পারলে ফুটানো সবচেয়ে ভালো; তা সম্ভব না হলে ব্লিচ বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. আলো ও যোগাযোগের সরঞ্জাম
দুর্যোগে বিদ্যুৎ প্রায়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই—
-
প্রতিটি ঘুমানোর জায়গায়, অফিসে এবং গাড়িতে টর্চলাইট ও অতিরিক্ত ব্যাটারি রাখুন।
-
ব্যাটারিচালিত বা হ্যান্ড-ক্র্যাঙ্ক রেডিও রাখলে জরুরি তথ্য পাওয়া সহজ হয়।
-
ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লে সংকেত দিতে একটি বাঁশি (হুইসেল) অবশ্যই রাখুন।
-
প্রথম দিকে ভয়েস কল নাও কাজ করতে পারে, তাই টেক্সট মেসেজ, ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগের জন্য বেশি নির্ভরযোগ্য।
-
দূরের কোনো আত্মীয়কে জরুরি যোগাযোগ ব্যক্তি হিসেবে ঠিক করে রাখুন।
৩. ফার্স্ট এড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম যেকোনো বিপর্যয়ে জীবন বাঁচাতে পারে। তাই—
-
ঘর ও গাড়িতে ছোট-বড় ফার্স্ট এড কিট রাখা জরুরি।
-
আগুন লাগলে ব্যবহার করার জন্য একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র খুব উপকারী।
-
দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ওষুধ, অতিরিক্ত চশমা, কন্টাক্ট লেন্স সলিউশন ও শিশুদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখুন।
-
স্যানিটেশন আইটেম, টয়লেট পেপার, ওয়েট টিস্যু প্রভৃতি অবশ্যই রাখুন।
-
গ্যাস বা পানির লাইন বন্ধ করার জন্য অ্যাডজাস্টেবল রেঞ্চ কাজে লাগবে।
৪. গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও নগদ টাকা
দুর্যোগে এটিএম বা ব্যাংকিং সিস্টেম অচল হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। তাই—
-
কিছু নগদ অর্থ জরুরি কিটে রাখা ভালো।
-
বীমা পলিসি, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, আর্থিক নথি—এসবের কপি একটি জলরোধী ব্যাগে সংরক্ষণ করুন।
৫. পোশাক ও সুরক্ষা সামগ্রী
পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনাকে বাইরে রাত কাটাতে হতে পারে। তাই—
-
গরম কাপড়, কম্বল অথবা স্লিপিং ব্যাগ রাখুন।
-
কাচ, ধ্বংসাবশেষ বা ভাঙা রাস্তার ওপর হাঁটার জন্য শক্ত ও মোটা সোলের জুতো রাখুন।

