ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে গড়ে উঠছে ‘তৃতীয় শক্তি’। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে গিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরির লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই সনদের বিষয়ে ইতিবাচক দলগুলোকে নিয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন এ জোট। খুব শিগগির সংবাদ সম্মেলন করে জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করা হবে।
একাধিক সূত্র জানায়, এই জোটে যুক্ত হতে যাচ্ছে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চের একটি দলও এতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচটি দল ও প্ল্যাটফর্ম তৃতীয় শক্তির প্রাথমিক কাঠামোতে একমত হয়েছে।
অক্টোবরে রাজনীতিতে নতুন বলয় গঠনের আলোচনা আরও জোরালো হয়। সে সময় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও নির্বাচনি ঐক্য: ক্ষমতা না জনতা’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে আপ বাংলাদেশ, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। নভেম্বরেও আরেকটি সভা হয়। এসব আয়োজন ছিল সমমনা দলগুলোকে কাছাকাছি আনার প্রচেষ্টা, যেখানে ঐক্যের ভিত্তি ধরা হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।
চলতি মাসের ৫ তারিখে রাজধানীর পল্টনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বসে গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি ও গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকটি দল। সেখানে আসন্ন নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন—উভয় বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়।
দলগুলোর সূত্র জানায়, অনেক দিন ধরেই তারা বিএনপি–জামায়াতের বাইরে নতুন রাজনৈতিক বিকল্প তুলে আনতে চাচ্ছেন। যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কারও সঙ্গেই জোটে যায়নি, তাই স্বতন্ত্র একটি তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মসূচি ও আলোচনা চলছে অব্যাহতভাবে।
গতকাল রোববার ফেনীতে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, নির্বাচন সামনে রেখে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন জোট ঘোষণা করা হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা সরাসরি ভূমিকা রেখেছে, তাদের নিয়েই এই জোট গঠিত হবে। এতে এবি পার্টির সঙ্গে থাকবে এনসিপিসহ কয়েকটি দল। তিনি বলেন, ২৫ নভেম্বর জোট ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। চারটি দলের বাইরে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূমও তৃতীয় শক্তি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিশ্রুতি যাদের আছে, তাদের নিয়ে ঐক্য গড়ার কাজ চলছে। পাঁচ-ছয়টি দলের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। আরও আলাপ চলছে। তবে এখনই সব তথ্য প্রকাশ করতে চান না।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, এই আলোচনা অনেক আগে থেকেই চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সময় বিএনপির বাইরে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণতন্ত্র মঞ্চের কিছু দল নিয়ে আলাপ শুরু হয়। সেখান থেকেই জুলাই সনদ ও রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে থাকা দলগুলোকে নিয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরির ধারণা আসে। তিনি জানান, পাঁচ থেকে ছয়টি দলের সঙ্গে আলোচনা এগিয়েছে এবং শিগগিরই এটি আত্মপ্রকাশের দিকে যাবে।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তারা তৃতীয় একটি বলয় তৈরি করতে চান। এনসিপি, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে তারা নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়েও রাজনৈতিক ভূমিকা রাখতে চান।
অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদ এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না জানালেও নতুন জোট গঠনে নিজেদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছে। দলের মুখপাত্র হাসান আল মামুন বলেন, তারা বড় পরিসরে ঐক্য গঠনের পক্ষে এবং পরিধি যত বাড়ানো যায়, তা সবার জন্যই ভালো।

