ভূমিকম্প বা ভবনধসের মতো বড় ধরনের দুর্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কাছে রয়েছে স্পেশাল রেসকিউ টিম (এসআরটি)। এই টিমের সদস্যরা প্রশিক্ষিত এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে সক্ষম। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এসআরটির মাত্র ২০০ জন সদস্য কর্মরত আছেন, যার মধ্যে ঢাকায় আছেন মাত্র ৬০ জন। রাজধানীর জনসংখ্যা ধরা হয় প্রায় দুই কোটি। অর্থাৎ, প্রতি তিন লাখ মানুষের বিপরীতে একজন মাত্র বিশেষ উদ্ধারকারী। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহে রয়েছে ২০ জন করে মোট ১৪০ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ। ঝড়, বন্যা ছাড়াও বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি আছে। শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং শনিবারের মৃদু কম্পন সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের বহুতল ভবনে বসবাসকারীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রথম প্রতিক্রিয়া সংস্থা ফায়ার সার্ভিস। তবে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে তাদের সক্ষমতা সীমিত। বিশেষত ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এককভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা কঠিন। এজন্য সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং অন্যান্য বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজে লাগানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, “১০০ বছর আগে সিলেটে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। এখন আবারো দেশজুড়ে ভূমিকম্প হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ভূমিকম্পের ‘রেড জোন’। আমাদের বর্তমান জনবল দিয়ে বড় ভূমিকম্পের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করা এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি অপরিহার্য।”
ঢাকা শহরে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি স্টেশন এবং দুটি বিশেষ টিম রয়েছে। মোট কর্মী সংখ্যা ৬৫০ জন। তবে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। হাইড্রোলিক কাটার, স্প্রেডার, র্যাম, সার্চ ক্যামেরা, থার্মাল ইমেজার ইত্যাদি পর্যাপ্ত নয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, “ভূমিকম্পের ধরণ অগ্নিকাণ্ডের থেকে ভিন্ন। বড় ভবন ধসে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই ছোট ও বহনযোগ্য যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়। আমাদের কর্মীরা তুরস্ক ও মিয়ানমারের ভূমিকম্পে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তবে জনবল বৃদ্ধি ও সক্ষমতা উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে।”
ফায়ার সার্ভিস ইতিমধ্যেই ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, এবং আরও স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হচ্ছে। বড় ভূমিকম্পে এই স্বেচ্ছাসেবকরা ফায়ার সার্ভিসের পাশে থেকে উদ্ধার কার্যক্রমে সাহায্য করতে পারে।
গত শুক্রবার ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০ জন নিহত এবং সহস্রাধিক আহত হয়। এরপর শনিবার আরও তিনটি কম্পন অনুভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কম্পনগুলো বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা। তাই নগরবাসীকে সচেতন থাকতে হবে, আর সরকারের পদক্ষেপ আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন।

