দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পে মানুষের শারীরিক ক্ষতি হলে প্রথমে যে জায়গায় সবাই ভরসা করেন– তা হল হাসপাতাল। তবে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর অনেক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ এবং বড় দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়।
ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি বড় হাসপাতালগুলো সারা দেশের রোগীদের বড় অংশের চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। সরকারি বড় হাসপাতালগুলোর মধ্যে পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবন ১২০ বছরের পুরনো এবং প্রতিদিন চার হাজারের বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা পান। এই ভবনটি শতবর্ষী হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত।
ফায়ার সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ২৪৮টি হাসপাতাল ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৭৪টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এ তালিকায় সরকারি হাসপাতালও রয়েছে। ২০১৭ সালে ঢাকাকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়। এর অংশ হিসেবে ৪৩৩টি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবনটি ১৯০৪ সালে আসাম গভর্নরের সচিবালয় হিসেবে নির্মিত হয় এবং ১৯৪৬ সালে ২০০ বেডের হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভবনের বড় অংশই ইট সুরকি দিয়ে তৈরি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আধিকারিকরা সম্প্রতি এটি পরিদর্শন করেছেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মিটফোর্ড হাসপাতালের দুটি পুরনো ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুই হাসপাতালের কার্যক্রমে ভূমিকম্পের প্রভাব নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্যোগ যেকোনো সময় ঘটতে পারে। তাই হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা জরুরি। হাসপাতালকে দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে এবং রোগীদের চিকিৎসা দিতে সক্ষম করতে হবে। দুর্যোগমুখী পরিস্থিতিতে হাসপাতাল প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে হবে। হাসপাতালগুলোর নিজস্ব পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।
ভূমিকম্প বা অন্য ধরনের দুর্যোগের ধরন অনুযায়ী রোগীদের আগমন হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নারী ও শিশুদের প্রতি দুর্যোগে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। বেশির ভাগ হাসপাতালই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়। সরকারি হাসপাতালে কিছুটা জায়গা থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো অল্প জায়গায় গড়ে ওঠায় কার্যকর নয়। প্রতিটি হাসপাতালে বছরে অন্তত একটি ‘মক ড্রিল’ (দুর্যোগ মহড়া) করা উচিত।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। তাই হাসপাতালগুলোকে এখনই প্রস্তুত করতে হবে। ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে টিম তৈরি করতে হবে। সরকারের কেন্দ্রীয় টিম থাকলে দুর্যোগ মোকাবিলা সহজ হবে।
বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, হাসপাতালগুলোতে একদমই প্রস্তুতি নেই। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে রোগীদের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালগুলো দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, যেকোনো দুর্যোগের ঘটনায় রোগীর চেয়ে অ-রোগীরা বেশি ভিড় করেন। ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে দেশের সব হাসপাতালে জরুরি মেডিকেল টিম কার্যক্রমে ছিল। ভবিষ্যতে বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতা নেবেন। কিছু প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে।

