জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার ভেঙে পালিয়েছিল হাজার হাজার বন্দি। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রায় ৭০০ জনের কোনো সন্ধান মেলেনি। তারা কোথায় আছে—দেশে নাকি বিদেশে পালিয়েছে—এ নিয়েও স্পষ্ট ধারণা নেই গোয়েন্দাদের।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, নিখোঁজদের বড় অংশ দুর্ধর্ষ অপরাধী, সন্ত্রাসী বা জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর ঠিক এমন সময় ঢাকা ও আশপাশে নৃশংস খুন, টার্গেট কিলিং ও পেশাদার কিলারদের তৎপরতা বাড়ছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা এখন এই দুই ঘটনার মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজছেন।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, জুলাইয়ের অস্থিরতায় মোট ২,২৫০ বন্দি বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যায়।
এদের মধ্যে ১,৫৫০ জন আবার গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণ করেছে। তবে ৭০০ জন এখনও পলাতক, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত—অর্থাৎ নিশ্চিত অপরাধী। বাকি বন্দিরা হত্যা, মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিচারাধীন ছিলেন।
ফরহাদ আরও জানান, পলাতক বন্দিদের মধ্যেই অন্তত ৯ জন জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট বলে তথ্য রয়েছে।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা মনে করেন, পলাতক বন্দিদের অরক্ষিত অবস্থায় থাকা দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় ঝুঁকি। তার মতে, পুলিশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিযান জোরদার করতে হবে।
অপরাধ বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, দুর্ধর্ষ আসামিরা অধরা থাকলে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, টার্গেট কিলিং এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, পলাতক বন্দিদের বিস্তারিত তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে আছে—সেই ডেটা ধরে সব বাহিনীর সমন্বিত অভিযান না হলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ে যে কোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে জেল ভাঙা আসামিদের গ্রেপ্তার অত্যন্ত জরুরি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এএইচএম শাহাদাত হোসাইন জানান, পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তার বর্তমানে পুলিশের “অগ্রাধিকারমূলক কাজ”। গোয়েন্দাদের সঙ্গে বিশেষ নজরদারি চলছে, এবং যেখানেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ১০ মাসে শুধু ঢাকাতেই ২০৫টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে—অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে ১৯–২০টি।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সহিংসতার পেছনে জেল পলাতক পেশাদার অপরাধীদের সক্রিয় ভূমিকা থাকতে পারে। রাজধানীর পুরান ঢাকা ও পল্লবীর সাম্প্রতিক দুটি হত্যাকাণ্ডে পেশাদার কিলারদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলেছে। এমনকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রভাব, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব—সবই সামনে আসছে।

