চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য প্রথম সমীক্ষা চালানো হয় ২০১৩-১৫ সালে সুইডিশ কনসালট্যান্টের মাধ্যমে। তাদের প্রতিবেদনে কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। পরে জাপানের মারুবেনি কোম্পানির মাধ্যমে আরেকটি সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। ২০১৯ সালে প্রতিবেদন জমা দিলেও তা প্রকাশ পায়নি।
এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ ২০২১ সালে নতুন সমীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করে, যা কার্যত স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অর্থায়নে আরো একটি সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্যাকেজে ৪৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে, যার ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) প্রকৌশলীরা বলছেন, ১৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের অবশিষ্ট ১১২ কিলোমিটার দ্রুত চার লেনে উন্নীত করলে ব্যয় হতে পারে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যদি চলমান প্রকল্পের ব্যয় যোগ করা হয়, তাহলে পুরো সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে খরচ দাঁড়াবে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়।
সওজ সূত্র জানায়, নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে শিকলবাহা ‘ওয়াই জংশন’ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার শহর থেকে লিংক রোডের বাঁকখালী নদী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক ইতোমধ্যে চার লেনে উন্নীত হয়েছে।
এছাড়া ২৪ কিলোমিটার নতুন তিন বাইপাস ও একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্রস বর্ডার প্রকল্পের আওতায় চারটি সেতুর সঙ্গে যুক্ত আরো পাঁচ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে। সব মিলিয়ে ৪৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ নেতৃত্বে করা সর্বশেষ সমীক্ষায় মহাসড়কের উন্নয়নের জন্য দুটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। একটি হলো বিদ্যমান সড়ক রেখে সার্ভিস রুটসহ ছয় লেনে উন্নীত করা। অন্যটি হলো ভায়াডাক্ট সড়ক (ফ্লাইওভার ধরনের) নির্মাণ। সড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক স্থাপনা থাকায় ভাঙতে হবে, কিন্তু ভায়াডাক্ট সড়ক হলে তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এই সড়ক দিয়ে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করা সম্ভব, ফলে কক্সবাজার পৌঁছানোর সময় কমবে। বুয়েট সমীক্ষা ভায়াডাক্ট সড়ক করার পক্ষে বেশি জোর দিয়েছে।
অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ভায়াডাক্ট সড়ক করলে ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনা ধ্বংস কম হবে। এছাড়া মহাসড়কের দুই পাশে পাহাড়ী এলাকা রয়েছে; বৃষ্টিতে বালু জমে যায় এবং যানবাহন চলাচলের কারণে হাতিসহ অন্যান্য প্রাণী ব্যাহত হয়। ভায়াডাক্ট সড়ক থাকলে এসব সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বিদ্যমান সড়কও কাজে ব্যবহার করা যেত। সূত্র: সমকাল
দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এবং টেকনাফে মিয়ানমারের সঙ্গে একমাত্র স্থলবন্দর থাকার কারণে এই মহাসড়ক দেশের পূর্বমুখী যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুই লেনের সড়কটি দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে পড়েছে এবং সরু হওয়ায় এটি ‘মরণফাঁদ’ হিসেবে পরিচিত। ১৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্যস্ত সড়কের ৪০ কিলোমিটার প্রস্থ মাত্র ১৮ ফুট; অবশিষ্ট অংশ ৩৪ ফুট। বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি চলাচলের কারণে অন্য গাড়ি সাইড নিতে বাধ্য হয়, অনেক সময় মূল সড়কের বাইরে চলে যায়।
সওজের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণাংশ থেকে চকরিয়ার খুটাখালী পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার সড়কে ৫০টির বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক এবং ১৫টির বেশি হাটবাজার রয়েছে।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল নোমান পারভেজ বলেন, চার লেনে উন্নীত করার ব্যয় নির্ভর করবে চলমান সমীক্ষার ওপর। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের বাইরে অবশিষ্ট অংশও চার লেনে উন্নীত করলে খরচ দাঁড়াবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এতে ইতোমধ্যে ৮,৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প যুক্ত করলে পুরো সড়কের চার লেনে উন্নয়নের ব্যয় হবে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। যদি হাটবাজার রক্ষার জন্য আন্ডারপাস করা হয় বা পুরো সড়ককে এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়, ব্যয় আরো বেড়ে যাবে।

