রাজধানীবাসীর আরামদায়ক পরিবহন মেট্রোরেলে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, যাত্রীদের মোবাইল চুরি এবং মাদকের চালান আটকসহ বিভিন্ন ঘটনা প্রায়ই মেট্রোরেলের চলাচল ব্যাহত করছে। এ কারণে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গত এক মাসে যাত্রী সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।
নভেম্বর মাসে পাঁচটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা-
গত নভেম্বর মাসে মেট্রোরেলের লাইনে ৫টি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
- ২৯ অক্টোবর বিয়ারিং প্যাড পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। ওই দিন সাময়িকভাবে মেট্রোরেল বন্ধ রাখা হয়।
- ২ নভেম্বর পল্লবী থেকে মিরপুর ১১ নম্বর অংশের মধ্যবর্তী স্থানে বৈদ্যুতিক লাইনের উপর তার পড়ে আধাঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ হয়।
- ২১ নভেম্বর মিরপুরে কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে দুইটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়।
- পরের দিন মেট্রোরেল লাইনের উপর একটি ড্রোন পড়ে সাময়িকভাবে চলাচল বিঘ্নিত হয়।
- ২৫ নভেম্বর সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনের মধ্যে একটি ব্যাগ পাওয়ায় মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়।
সর্বশেষ, গত রোববার রাত আটটায় মেট্রোরেলের ছাদ থেকে ইয়াসিন নামের এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তাকে পরে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। শিশুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে সচিবালয় স্টেশনে পৌঁছায়। এই ঘটনায় মেট্রোরেল তিনটি স্টেশনে সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।
যাত্রী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে দশ বছরের একটি শিশু নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ট্রেনের ছাদে উঠতে পারল এবং কেন ট্রেন থামানো হয়নি।
নিরাপত্তার ব্যাখ্যা-
ডিএমটিসিএল এমডি ফারুক আহমেদ বলেন, শিশুটি ট্রেনে উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তা বিষয়টি জানানো হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন বন্ধ করা হয়। একজন ব্যক্তির পেছনে একজন নিরাপত্তা রাখা সম্ভব নয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা লুজ নয়, তবে সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ভিজিল্যান্স জোরদার করা হচ্ছে।
যাত্রী কমেছে ১০ শতাংশ-
বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর পর মেট্রোরেলের যাত্রী সংখ্যা কমছে। গড়ে দৈনিক ৪ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন, যা এখন প্রায় ৪ লাখের কাছাকাছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, মেট্রোরেলের কারিগরি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের সচেতন হতে হবে।
নিরাপত্তা ও পুলিশি দায়িত্ব-
মেট্রোরেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এমআরটি পুলিশের প্রধান ডিআইজি সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, এমআরটি পুলিশ স্টেশন পাহারা দেয়, তবে স্টেশনের বাইরে ঘটলে তা আমাদের আওতায় পড়ে না।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, এখন নির্বাচনের সময়- যার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।

