গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ডাদেশ নিয়ে সম্প্রতি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলার নথি-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে।
দুদকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অভিযোগগুলো মূলত শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। মামলার নথিতে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকা অবস্থায় টিউলিপ সিদ্দিকও সরকারি প্লট বরাদ্দ পেয়ে ছিলেন।
তিনটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বিচার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৫-এ বিশেষ মামলা নম্বর ১৮/২০২৫-এ টিউলিপ সিদ্দিককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি তার প্রভাব ব্যবহার করে খালা শেখ হাসিনাকে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্লট বরাদ্দে প্ররোচিত, উৎসাহিত ও প্রভাবিত করেছিলেন। আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দুদক এ ব্যাখ্যা দিয়েছে। মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের কয়েকজন আদালতে শপথ নিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় টিউলিপ সিদ্দিক নিজের প্রভাব খাটিয়ে এসব প্লট বরাদ্দ নিশ্চিত করেছেন।
নথিপত্রে দেখা গেছে, টিউলিপ, তার মা ও ভাইবোনদের নামে একাধিকবার প্লট বরাদ্দ হয়েছে। এসব কার্যক্রম অপরাধ দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(কা), ২০১, ২১৭, ২১৮, ৪০৯ ও ৪২০ ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য।
দুদক আরও জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার প্রভাব খাটিয়ে গুলশান-২ এর অত্যন্ত মূল্যবান একটি সরকারি আবাসিক প্লট (প্লট নম্বর সিডব্লিউএন (এ)-২; পরে পরিবর্তিত হয়ে প্লট নম্বর ০৫, ব্লক এনই (এ), গুলশান; ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১; বাড়ি নং ৫এ ও ৫বি; বর্তমানে বাড়ি নম্বর ১১৫ ও ১১বি; রোড নম্বর ৭) পেয়েছেন। এগুলো কোনো দূরবর্তী কৃষিজমি নয়। ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় এসব প্লটে একাধিক ফ্ল্যাট বা বড় বাড়ি নির্মাণের সুযোগ ছিল।
দুদক জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাঁচটি ফ্ল্যাট ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এগুলো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়। দুদক প্রশ্ন করেছে, একজন জনপরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি কিভাবে ঢাকা ও লন্ডনের মতো ব্যয়বহুল শহরে একাধিক সম্পত্তি কেনার মতো বিপুল সম্পদের মালিক হন। টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তার অনুপস্থিতিতেই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। দুদক বলেছে, তিনি আদালতে হাজির হওয়ার এবং আইনজীবী নিয়োগের পূর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই বিচার এড়িয়ে গেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, উপস্থাপিত নথিপত্র, সাক্ষ্য ও পরিস্থিতিগত প্রমাণ টিউলিপ সিদ্দিককে দুর্নীতি সহায়তা ও প্ররোচনার সঙ্গে যুক্ত হিসেবে প্রমাণ করে। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা বা তিনি নির্দোষ, এমন দাবি করার কোনো অবকাশ নেই।

