ঢাকার আশপাশে একই এলাকায় ধারাবাহিকভাবে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ। দুদিনের ব্যবধানে আবারো ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুর। ২১ নভেম্বরের বড় ভূমিকম্পের পর এটিকে সপ্তম কম্পন হিসেবে গণনা করা হচ্ছে এবং এদের মধ্যে ছয়টির কেন্দ্র ছিল নরসিংদী এলাকায়।
এই পুনরাবৃত্ত ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, একই এলাকায় বারবার কম্পনের উৎপত্তি হওয়াকে বড় ভূমিকম্প-পরবর্তী আফটারশক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির জানান, বড় কম্পনের পর ছোট ছোট মৃদু ভূমিকম্পের ধারা স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় এবং এখন পর্যন্ত যেগুলো রেকর্ড করা হয়েছে সেগুলোকে আফটারশক হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো কী ধরনের কম্পন হতে পারে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য এই মুহূর্তে তাদের কাছে নেই বলেও তিনি জানান। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ডেটা তাদের গবেষণায় একই সিদ্ধান্তই নির্দেশ করছে—এগুলো আফটারশক।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর শিবপুর। এটি ছিল মৃদু মাত্রার কম্পন।
এর আগে ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ওই কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মিনজিন এলাকায়, প্রায় ১০৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার গভীরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এটি ঢাকার অবস্থান থেকে প্রায় ৪৩১ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল এবং এটিও ছিল হালকা ধরনের কম্পন।
বাংলাদেশ সময় ২ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে বঙ্গোপসাগরেও ৪ দশমিক ২ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। তার আগে ২৭ নভেম্বর বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে রাজধানীতে ৩ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়, যার কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল। সেদিন ভোরে সিলেট ও কক্সবাজারের টেকনাফেও দু’দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
এর মধ্যেই সবচেয়ে বড় কম্পনটি ঘটে ২১ নভেম্বর, যখন নরসিংদীতে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষ কাঁপন অনুভব করেন। সেই ঘটনায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয় এবং কয়েকশ মানুষ আহত হন। রাজধানীর বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়, কিছু ভবন হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটে। এরপর ২২ নভেম্বর সকালে একবার এবং সন্ধ্যার আগমুহূর্তে আরো দু’বার কম্পন অনুভূত হয় ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায়।
ক্রমাগত এসব ভূমিকম্প নাগরিকদের মনে নতুন করে শঙ্কা সৃষ্টি করছে, তবে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে বড় কম্পনের পর কিছু সময় ধরে আফটারশক হওয়াটা স্বাভাবিক ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া।

