বাংলাদেশের ৫৪টি কারাগারে অ্যাম্বুলেন্স নেই। ফলে গুরুতর অসুস্থ বন্দিদের হাসপাতালে পাঠাতে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন রিকশায় বা ‘লেগুনা’-তে, যেখানে অনেকের মৃত্যু ঘটছে পথে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (এএসকে) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১১২ জন বন্দি হাসপাতালে বা পথে মৃত্যুবরণ করেছেন।
অ্যাম্বুলেন্সহীন এই কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩৪,৮৪০ জন। কারাগার কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে “গুরুতর সংকট” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
দেশের ৬৮টি কারাগারের মোট ধারণক্ষমতা ৪২,৫৯০। তবে বছরের বিভিন্ন সময়ে বন্দির সংখ্যা ওঠানামা করে, কখনও কখনও ৭০,০০০ পর্যন্ত পৌঁছায়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কারাগার অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিকভাবে ১০৭টি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য চিঠি পাঠায়। পরে বাজেট কমানোর নির্দেশ আসে। বাজেট কেটে ৪৬টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও, এখনও পর্যন্ত কোন অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি।
সুত্র বলছে, ৪৬টি অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠিপ্রেরণার কাজ চলছেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেরিতে সিদ্ধান্ত না আসায় সমস্যা এখনও মুলতুবি রয়েছে।
বর্তমানে দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে মাত্র ১৪টিতে অ্যাম্বুলেন্স আছে। কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুইটি, আর কাশিমপুর-১, কাশিমপুর-২, হাই সিকিউরিটি, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, বরিশাল ও খুলনা কারাগারে প্রত্যেকে একটি করে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। কক্সবাজার কারাগারে পূর্বে একটি ছিল, তবে সাম্প্রতিক একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর তা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
কারাগার কর্তৃপক্ষ জানান, বন্দিরা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, যেমন কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুবিক সমস্যা, পেটের অসুখ এবং মানসিক রোগ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গুরুতর অসুস্থদের ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারা অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা দ্রুত বাড়ানোর তাগিদ জানিয়েছেন, যাতে চিকিৎসা যথাযথভাবে দেওয়া যায়।
অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে একসঙ্গে একাধিক বন্দিকে হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গুরুতর অসুস্থ বন্দিদের রিকশা বা লেগুনায় বাধ্য করা হয়, এবং অনেকের মৃত্যু ঘটে পথে।
কারাগার অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, বন্দি অবস্থায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ১,৫৭৭ জন মারা গেছেন, আর ৪৯১ জন মারা গেছেন পথে হাসপাতালে যাওয়ার সময়।
মোহাম্মদ জান্নাতুল ফারহাদ, সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) বলেন, “৫৪টি কারাগারে কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। বন্দিরা প্রায়শই পথে বা হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মারা যাচ্ছেন। কিছু কারাগারে একাধিক অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন, কিন্তু আমরা দিতে পারছি না।” তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর, যশোর, কক্সবাজার, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কারাগারে অবিলম্বে একাধিক অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন।
ফারহাদ আরও বলেন, অনেক বন্দি জটিল রোগে ভুগছেন এবং কেউ কেউ ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়েছে।
কর্ণেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, জানান, “একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়ে প্রায় চার বছর হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে আয় বাজেট থেকে অ্যাম্বুলেন্স কিনতে হবে, কিন্তু এ বছর কোন বরাদ্দ নেই। অ্যাম্বুলেন্সের ঘাটতি বন্দিদের হাসপাতালে স্থানান্তরকে গুরুতর সমস্যায় ফেলেছে। অনেকেই পথে মারা যাচ্ছেন।”

