রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া অবৈধ আয় বা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রশাসনিক বিধি-বিধান কেবল একটি উৎস বন্ধ করতে পারে, কিন্তু তা না হলে অন্য উৎস দ্রুতই চালু হয়ে যায়।
আজ রোববার সকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’। উদ্বোধনী অধিবেশনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “দেশে যদি একটি অশুভ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, শুধু প্রশাসনিক সংস্কার তা সমাধান করতে পারবে না।” উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ভারতে ঘুষ নেওয়া ও দেওয়াকে দুটোই অপরাধ মনে করা হয়। আমাদের দেশে শুধু নেওয়াকে অপরাধ বলা হয়, দেওয়াকে নয়।”
উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু গণতান্ত্রিক দেশেই হয়নি, চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশেও হয়েছে। কারণ এসব দেশে জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি ছিল।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “উদারনীতিকরণের সফলতা মূল্যবোধ ও আস্থার ওপর নির্ভর করে।”
জবাবদিহি ও দায়িত্ববোধের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রের একটি প্রসঙ্গ উদাহরণ হিসেবে আনেন। তিনি বলেন, “এখনকার প্রাথমিক শিক্ষকেরা পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন করছেন। আমাদের সময় শিক্ষকেরা বাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীর খোঁজ নিতেন। এটিই দায়িত্ববোধ।” সামাজিক আচরণবিধি, মূল্যবোধ ও আস্থার পরিবেশ তৈরি করার জন্য গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি দেশের প্রশাসনিক বাস্তবতার কিছু চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আগের অনেক প্রকল্প পরিচালক চলে গেছেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে নতুন প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাচ্ছে না।”
নিজের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আগের সময় কোনো কাজ করতে বললেই তা হয়ে যেত। সচিব ছিলেন আকবর আলি খান ও সা’দত হুসাইন। এখন বললেই কাজ হয় না; সমস্যা কোথায় তা নিজেকেই খুঁটিয়ে দেখতে হয়।”
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এম এনামুল হক। স্বাগত বক্তব্যে তিনি জানান, “দুই দিনের গবেষণা সম্মেলনে প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এতে যুব বেকারত্ব, দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সংকট আলোচনায় আসবে।”
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চারটি উপস্থাপনা উপস্থাপন করা হয় এবং সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মন্ডল।

