রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার তারাপুর কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশে আগুন লাগার ঘটনায় পাংশা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। রোববার রাতে কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সবুজ হোসেন বাদী হয়ে জিডি করেন।
পরবর্তী দিন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় পাংশা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা অবিলম্বে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিফাতুল হক। তিনি ও পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মইনুল ইসলাম দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এছাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ আহম্মেদও উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিজয়ের মাসে কারা এমন ঔদ্ধত্য দেখান? তাঁরা কি স্বাধীনতাকে সম্মান করেন না? না হলে বিজয়ের মাসে এমন জঘন্য কাজ সম্ভব হতো না।’
কবরস্থান কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. সবুজ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কবরস্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আমি রোববার রাতে থানায় জিডি করেছি। আশা করি পুলিশ দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
স্থানীয়রা জানান, রোববার ভোরে ফজরের নামাজের সময় মুসল্লিরা তারাপুর জামে মসজিদে আসার সময় পাশে অবস্থিত কবরস্থানে আগুন দেখতে পান। মসজিদের মুয়াজ্জিন ও কবরস্থান দেখভালের দায়িত্বে থাকা মো. শহিদুল ইসলাম মাইকের মাধ্যমে দ্রুত আগুন লাগার খবর প্রচার করেন।
মুসল্লিসহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষ মিলে দ্রুত আগুন নেভান। আগুনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত কবরস্থানের বাঁশ ও প্লাস্টিকের বেড়া পুড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার স্থানে পেট্রল ও কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউএনও, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
দুপুরে কবরস্থান পরিদর্শনকালে পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মইনুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার রাতে থানায় যোগদান করে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা জানতে পেরেছি। রাতেই থানায় জিডি করা হয়েছে। আমি নিজে বিষয়টি তদন্ত করছি। আশা করি দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’
ইউএনও মো. রিফাতুল হক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত কবরস্থানে আগুন লাগার ঘটনাটির দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে কবরস্থান ঘিরে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।’

