পেঁয়াজের চারা রোপণের মৌসুমে ঝিনাইদহের শৈলকূপায় তীব্র শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে এখন কৃষকের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। বার্ষিক পরীক্ষার পর অবসর সময়টুকু কাজে লাগাতে এবং পরিবারকে সহায়তা করতে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৫০০ টাকা মজুরিতে অন্যের জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছে। শৈলকূপার বিভিন্ন মাঠে এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বড়দের সঙ্গে কিশোর-কিশোরীরাও সমানতালে পেঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত। পড়াশোনার চাপ কম থাকায় বন্ধুরা দলবেঁধে সকালেই মাঠে পৌঁছে কাজ শুরু করছে। গোবিন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী ভোর ৭টার আগেই ৮ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে মনোহরপুর ইউনিয়নের বিজুলিয়া মাঠে পৌঁছে যায়।
সেখানে কাজ করা শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন জানান, বাড়িতে বসে থাকার চেয়ে কিছু আয় করতে পারাই ভালো। এতে বাবার উপকার হবে এবং নতুন বছরের খরচও মেটানো যাবে বলে তিনি মনে করেন।
দামুকদিয়া গ্রামের কৃষক মিন্টু মিয়া বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণে ১৫–২০ শ্রমিক দরকার হয়। হঠাৎ একসঙ্গে অনেক জমিতে রোপণ শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকট তীব্র হয়েছে। বাড়তি মজুরি দিলেও শ্রমিক মিলছে না। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরাই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মাঠে না নামলে পেঁয়াজ রোপণের কাজ শেষ করা সম্ভব হতো না।
শৈলকূপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান খান জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনে শৈলকূপা দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার হেক্টরে রোপণ শেষ হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে ৫০০ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে। কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।
শ্রমিক সংকটে শিক্ষার্থীদের মাঠে নামা এ মৌসুমে শৈলকূপার পেঁয়াজ আবাদে বড় সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

