আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে মারধর, অপহরণচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আজ রোববার বাদীপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে মামলায় তুরিন আফরোজের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।
শুনানিতে আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করার কারণে তার বিরুদ্ধে বারবার মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলাসহ আজকের মামলাটি অন্তর্ভুক্ত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তুরিন আফরোজকে হাজতখানায় রাখা হয়। হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে বেলা ১১:৩০টার দিকে আদালতের উদ্দেশে হাজতখানা থেকে বের করা হয়। দুই পাশে পুলিশ নারী সদস্যরা তাকে ধরে রাখেন। সামনে ও পেছনে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। নবম তলার ৩২ নম্বর আদালতে তোলার সময় তিনি হাস্যোজ্জ্বল দেখা দেন। বিচারক কাঠগড়ায় ওঠার সময় তার হেলমেট খুলে রাখা হয়। এরপর তিনি আইনজীবীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথন করেন।
পরবর্তীতে তাকে ৩৩ নম্বর আদালতে হেলমেট ও জ্যাকেট পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন নয়ন প্রশ্ন করলে তুরিন আফরোজ কোনো জবাব দেননি। এরপর আদালতে তার গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালনের কারণে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি অসুস্থ। জামিন পেলে পলাতক হবেন না। যেকোনো শর্তে তার জামিন আবেদন করছি।” তিনি আরও বলেন, এই মামলার অভিযোগ ২০২২ সালের। ২০১৯ সালে তিনি ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাই তিন বছর পর প্রভাব খাটানো সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, তুরিন আফরোজ বাদীর কাছ থেকে ৭৮ লাখ টাকায় দুটি বাস কিনেছেন। কিন্তু পুরো টাকা পরিশোধ না করে বাস নিয়ে যান। বাকি টাকা চাইলে তিনি বাদীকে হুমকি দেন। বাদীর বাসে গিয়ে ভাঙচুর এবং কন্যাসন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করেন। ২০২২ সালে প্রথমে থানা মামলা নেয়নি, পরে আদালতে মামলা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তুরিন আফরোজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুলাই দুইটি বাস কেনার জন্য তুরিন আফরোজ বাদীর সঙ্গে ৭৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন। তিনি ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি টাকা ২৪ মাসের মধ্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাস দুটি নেন। এরপর কোনো কিস্তি পরিশোধ না করে বাদীকে হুমকি ও মারধর করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল বাদী টাকা চাইলে ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী আসামির নির্দেশে বাদীর বাসে গিয়ে তাকে মারধর করে এবং সাত বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে অপহরণের চেষ্টা করে। ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ এসে কন্যাসন্তানকে নিরাপদে বাসার বাইরে রেখে যায়। মামলাটি ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল নাবিশা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আলম নাহিদ বাদী হয়ে দায়ের করেন।
গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা থেকে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন হত্যাচেষ্টা মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এরপর তিনি কারাগারে ছিলেন। তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

