সম্পাদক পরিষদ সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আটকে রাখার পর পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি নূরুল কবীর ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের আচরণ অতীতের স্বৈরাচারী শাসনামলে সাংবাদিকদের ওপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের স্মৃতি উসকে দেয়।
গত রোববার সন্ধ্যার পর সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাকে বলা হয়, ডিবিপ্রধান তার সঙ্গে কথা বলবেন।
ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম সোমবার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে জানা যায়, ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামের একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ গত রবিবার রাত দুইটার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়েরের পর গতকাল (সোমবার) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে সাত দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়। শুনানির পর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশীতা ইসলাম পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুক জানান, রিমান্ডের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি করেছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলের জন্য জামিন আবেদন করেন।
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ১৪ ডিসেম্বর কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। তাকে সেখানে আটকে রেখে পরদিন মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ধরনের আচরণ অতীতের স্বৈরাচারী শাসনামলের সাংবাদিক নিপীড়নের স্মৃতি মনে করায়। এ ধরনের ঘটনা তারা অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও দেখেছে। তখন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হয়রানি ও নির্বিচার গ্রেপ্তার ছিল নিয়মিত ঘটনা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে—যদি কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তা অবশ্যই প্রচলিত আইন ও ন্যায়বিচারসম্মত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। অভিযোগ ছাড়া ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া, আটকে রাখা বা পরে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে এবং অনেকেই এখনও কারাগারে রয়েছেন। সরকার মিথ্যা মামলা ও হয়রানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিলেও মামলা প্রত্যাহার হয়নি। সম্পাদক পরিষদ এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং সব ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

