ঢাকার ভোরের নিস্তব্ধতা বা গভীর রাতের অন্ধকারে নগর রাস্তায় ময়লার গাড়ি যেন মৃত্যুর বাহন হয়ে ঘুরছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো নগরবাসীর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কখনো ডেমরা, কখনো যাত্রাবাড়ী, আবার কখনো মুগদা—হঠাৎ বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা এসব গাড়ির নিচে জীবন হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দুর্ঘটনার খবর ছাপা হলেও দীর্ঘমেয়াদি বিচার কিংবা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা প্রায়ই হয় না।
সর্বশেষ ডেমরায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই তরুণ—ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী তাহসিন তপু (২৫) ও ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইরাম হৃদয় (২৩)। তারা ভোরে একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িটি হঠাৎ অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। নিহতদের বন্ধুদের অভিযোগ, গাড়ির চালক মাদকাসক্ত ছিলেন।
ডেমরা থানার পুলিশ অভিযুক্ত চালক মো. রফিকুল ইসলাম রফিককে গ্রেপ্তার করেছে এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রশাসন এটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছে না, বরং সড়ক পরিবহন আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ঢাকার ময়লার গাড়ির দুর্ঘটনা নতুন নয়। গত তিন বছরে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগে যেমন ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান নিহত হয়েছেন, তেমনি ২০২৩ সালের ৬ মার্চ উত্তর সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় কাপড় ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব (২৬) প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্য ঘটনাতেও দেখা গেছে, চালকদের অধিকাংশেরই বৈধ লাইসেন্স নেই এবং অনেক গাড়ির ফিটনেস নেই।
নগরবাসীরা বলছেন, ভোরে ও গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় ময়লার গাড়িগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করে। চালক সংকট ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে ভারী ট্রাকগুলো অদক্ষদের হাতে থাকে। এর ফলে জনবহুল নগরে দুর্ঘটনা ঘটে এবং জীবনহানি ঘটে।
তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রি। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মাত্র ৯টির মামলা বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আপসে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং অভিযুক্তরা খালাস পেয়েছেন।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ময়লার গাড়ির চাপায় মৃত্যুর ঘটনা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি ত্রুটিকে নির্দেশ করে। দীর্ঘসূত্রি তদন্ত, সাক্ষীর অভাব ও আপসের কারণে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। শুধুমাত্র সঠিক তদারকিই নগরের জীবনহানি রোধ করতে পারে।

