কুষ্টিয়া-৩ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজার সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। সংগঠনটির দাবি, ১৯৭১ সালের গণহত্যায় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ভূমিকা আড়াল করতেই দলটি নতুন করে মাঠে নেমেছে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এ বক্তব্য দেন। বিবৃতিতে মুফতি আমির হামজার বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি দাবি করেছেন—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে এতদিন যে ইতিহাস প্রচার করা হয়েছে, তার বড় অংশই মিথ্যা রচনা। বদরুদ্দীন উমরের লেখা বই উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচলিত বয়ানের ৯০ শতাংশই মিথ্যা এবং জামায়াতে ইসলামী তখন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নয় বরং ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফয়জুল হাকিম বলেন, ১৯৭১ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন সামরিক শাসনের অধীনে গঠিত মালেক মন্ত্রিসভার অন্যতম শরিক ছিল জামায়াতে ইসলামী। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরিচালিত বাঙালি নিধনযজ্ঞ ও গণহত্যায় দলটি প্রত্যক্ষভাবে সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নেয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মুক্তিকামী জনগণ সশস্ত্র স্বাধীনতাসংগ্রাম ও জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই সংগ্রামে অংশ নেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন কমিউনিস্ট বিপ্লবী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সদস্য-সমর্থকেরা।
ফয়জুল হাকিম বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। একই সঙ্গে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত মিথ্যা বয়ানও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে জামায়াতে ইসলামী নতুন প্রজন্মের সামনে নিজেদের অতীত গণবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা বিশেষত ১৯৭১ সালের গণহত্যায় সহযোগী ভূমিকা আড়াল করার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা, গোপন বিপ্লবী ও সংসদীয় কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের ভূমিকা এবং তৎকালীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান নিয়ে কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পতিত শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে প্রণীত ইতিহাস সম্পর্কেও উমর কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, এর বড় অংশই মিথ্যা।
মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক বলেন, বদরুদ্দীন উমরের এই বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে উদ্ধৃত করে মুফতি আমির হামজা যে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছেন, তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। জনগণকে ইতিহাস ভুলে যেতে আহ্বান জানিয়ে তিনি মূলত জামায়াতে ইসলামীর অতীত গণবিরোধী ভূমিকা আড়াল করার চেষ্টা করছেন, যা একটি অসৎ ও মিথ্যাবাদী রাজনৈতিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

