চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের চাঁনখালী খালের ওপর নির্মিত ‘চন্দ্রকলা বেইলি ব্রিজ’ এক সময় ছিল এলাকার হাজারো মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা। গৈড়লা, ধলঘাট, তেকোটা, মুকুটনাইট ও ডেঙ্গাপাড়া এলাকার মানুষের চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা স্টিলের এই সেতুটি এখন এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর চাঁনখালী খালের ওপর ‘চন্দ্রকলা শেখ কামাল গার্ডার ব্রিজ’ নির্মাণ ও উদ্বোধনের পর পুরোনো বেইলি ব্রিজটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তবে নতুন সেতু চালুর এক দশক পেরিয়ে গেলেও এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে পরিত্যক্ত সেতুটি এখনো অপসারণ করা হয়নি।
পরিত্যক্ত বেইলি ব্রিজটি খালের পানির খুব কাছাকাছি নিচু অবস্থানে থাকায় জোয়ারের সময় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে খালনির্ভর লবণ ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচুরিয়ার মোড় থেকে শুরু করে প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কসহ বেইলি ব্রিজটি একসময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ছিল। পরে বেইলি ব্রিজটি বাদ দিয়ে সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পটিয়া লবণ শিল্প নগরীতে বর্তমানে অর্ধশতাধিক লবণ মিল রয়েছে। কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া ও বাঁশখালী এলাকা থেকে অপরিশোধিত ক্রুড লবণ ইঞ্জিনচালিত বোটে করে চাঁনখালী খাল হয়ে এসব মিলে আনা হয়। কিন্তু পরিত্যক্ত বেইলি ব্রিজটির কারণে এই নৌপথে নিয়মিত বোট চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
পটিয়া ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকার জে. কে. সল্ট ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা মনসুর আলম বলেন, বেইলি ব্রিজটি তুলনামূলকভাবে নিচু হওয়ায় মালবাহী বোট চলাচল করতে পারছে না। এতে লবণ ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এছাড়া স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিত্যক্ত বেইলি ব্রিজটি বর্তমানে মাদকসেবী ও অপরাধীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় সেখানে বখাটে ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় ইভটিজিং ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন সজিব বলেন, পরিত্যক্ত সেতুর ওপর নিয়মিত মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। বখাটেদের আনাগোনায় এলাকায় ছিনতাই বেড়েছে। কিছুদিন আগেও একজন শিক্ষক ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল জানান, পুরোনো চন্দ্রকলা বেইলি ব্রিজটি অপসারণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই সেতুটি অপসারণ করে অন্যত্র স্থাপনের আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানুর রহমান বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিত্যক্ত বেইলি ব্রিজটি অপসারণ করা হবে।

