ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক গত আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই উত্তেজনাপূর্ণ। এখন তা আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। দুই দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গতকাল চট্টগ্রামের ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (IVAC) অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। কেন্দ্রটি জানায়, শহরের সহকারী হাই কমিশন (AHCI) এলাকায় নিরাপত্তার পরিস্থিতি সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তারা কার্যক্রম স্থগিত রাখছে।
এর আগে, ঢাকায়, খুলনায় ও রাজশাহীতে IVAC-গুলো একদিন করে অর্ধেক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। কেন্দ্রগুলো নিরাপত্তার কারণ দেখিয়েছিল, বিশেষ করে ওই তিন শহরে বিক্ষোভের কারণে।
নিউ দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের পাশে বিক্ষোভ নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির বিবৃতি ভিন্নরকম।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত শনিবার ২০-২৫ জন যুবক ময়মনসিংহের পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল। তবে তারা কোনো নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেনি। ভারতীয় মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “কিছু বাংলাদেশি মিডিয়া এই ঘটনার বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করেছে।” তিনি আরও জানান, বিক্ষোভকারীরা ফেন্স ভাঙার চেষ্টা করেনি, পুলিশ কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের বিতরণ করেছে।
ঢাকায় বিদেশি উপদেষ্টা তৌহিদ হোসাইন প্রশ্ন তোলেন, ভারতের কর্তৃপক্ষ কীভাবে বিক্ষোভকারীদের হাই কমিশনের নিরাপদ কূটনৈতিক এলাকায় প্রবেশ করতে দিল। তিনি ভারতের প্রেসবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, বিষয়টি যে সহজভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, তা মোটেই সত্য নয়।
“বাংলাদেশের মিশনটি কূটনৈতিক এলাকায় গভীরভাবে অবস্থিত। এটি এলাকায় বাইরে বা প্রবেশদ্বারের কাছে নয়। কীভাবে ২৫-৩০ জন হিন্দু উগ্রবাদী এভাবে নিরাপদ এলাকায় প্রবেশ করতে পারল?” – তিনি প্রশ্ন তোলেন।
তিনি জানান, বিক্ষোভকারীরা শুধু হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দেননি, বরং আরও গুরুতর কথা বলেছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাই কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ এবং তার পরিবারের ওপর মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।
“অতএব, এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা ভারতের দায়িত্ব,” তৌহিদ হোসাইন বলেন।
তিনি বলেন, সাধারণত কোনো বিক্ষোভকারী গোষ্ঠী কূটনৈতিক এলাকায় এভাবে পৌঁছানোর আগে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। এটি বাংলাদেশসহ সকল দেশের সাধারণ নীতি।
তৌহিদ হোসাইন আরও বলেন, ময়মনসিংহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা যুক্ত করা অযৌক্তিক। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি অন্যান্য দেশকেও এই দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
ঢাকা-নিউ দিল্লি উভয়ই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তৌহিদ বলেন, প্রয়োজন হলে মিশনের কর্মী সংখ্যা কমানো হতে পারে, তবে আপাতত ভারত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ঢাকায় বিশ্বাস রয়েছে।
গত আগস্টের পরিবর্তনের পর ভারত বাংলাদেশে ভিসা ও বাণিজ্য সম্পর্কেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল। অন্যদিকে, ঢাকা ভারতীয় সুতা আমদানি সীমিত করেছে।
নির্বাচন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় দুই দেশের বক্তব্য ভিন্ন। ঢাকায় মনে করা হচ্ছে, ভারতের মিডিয়ায় কিছু ঘটনা অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে উত্তেজক মন্তব্য এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের পর হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য ঢাকা দুইবার ভারতকে অনুরোধ করেছে।
সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান হাদির হত্যার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে। হত্যার অভিযোগে মূল সন্দেহভাজনরা ভারতের দিকে পালিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ।
ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় বর্মাকে সমন করা হয় এবং “বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম” সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের অগ্রগতি ব্যাহত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও সমন্বয়।
ভারত সরাসরি এই দাবি অস্বীকার করেছে, বলেছে তারা কখনোই নিজের ভূখণ্ডকে বাংলাদেশবিরোধী কাজে ব্যবহারের সুযোগ দেয়নি। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন জানানো হয়েছে।
তৌহিদ হোসাইন বলেন, ভারতীয় পরামর্শের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ পূর্বের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ভারত কখনো নির্বাচনের বিষয়ে সরাসরি কথা বলেনি।

