চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশে ২৮৬টি মিথ্যা মামলায় সাড়ে চার লাখ ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কারফিউ দিয়ে গণহত্যায় উস্কানির অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন। দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অপর সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনেছে। এসব অভিযোগের ওপর শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর।
শুনানির শুরুতে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের ব্যক্তিগত দায় তুলে ধরেন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাদের মধ্যে হওয়া একটি ফোনালাপ ট্রাইব্যুনালে বাজিয়ে শোনানো হয়। ফোনালাপটি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের। এরপর পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতেন সালমান ও আনিসুল। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাই তারা ফোনে কথা বলেন। ফোনালাপে আন্দোলনকারীদের শেষ করে দেওয়ার কথা শোনা যায়। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই রাতেই কারফিউ জারি করে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন।
এর পর ২২ জুলাই ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন সালমান এফ রহমান। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জীবন দিয়ে হলেও হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। এর মধ্যেই আনিসুল হকের নির্দেশে ২৮৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়। এসব মামলায় সাড়ে চার লাখ ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়। প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনায় বহু ছাত্র-জনতা প্রাণ হারান। এরপরও নির্যাতন বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, সালমান ও আনিসুলের জ্ঞাতসারে ২৩ জুলাই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তাদের উসকানি ও প্ররোচনায় মিরপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, মারণাস্ত্র ব্যবহারে তারা প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র করেন। তাদের সহায়তা ও উসকানিতে ২৮ জুলাই মিরপুর-১০ এলাকায় আক্তারুজ্জামান নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে।
চতুর্থ অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কারফিউ জারির মাধ্যমে মারণাস্ত্র ব্যবহারে উসকানি দিয়ে ৪ আগস্ট মিরপুর-১ এলাকায় আকাশ, সেতু, আলভীসহ ১২ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে পরিকল্পনা করেন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। তাদের নির্দেশে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের হামলায় মিরপুর-২, ১০ ও ১৩ নম্বর এলাকায় আল-আমিন, আশরাফুল, সাব্বির, রিতাসহ ১৬ জন নিহত হন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সালমান ও আনিসুল ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই গঠনের আবেদন জানান তিনি।
পরে আসামিপক্ষে শুনানির জন্য সময় চান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তার আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল সালমান ও আনিসুলের পক্ষে শুনানির জন্য আগামী ৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

