যশোরের ঝিকরগাছা সরকারি এম এল মডেল হাই স্কুলে প্রতিদিনই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে পাঠদান। তিনতলা ভবনটির দেয়ালের রং উঠে গেছে, জায়গায় জায়গায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়াল, ছাদ, পিলার ও বিমে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে এই জরাজীর্ণ ভবনেই। ইতোমধ্যে দেয়ালের প্লাস্টার ও ছাদের অংশ পড়ে শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সবাই প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝিকরগাছা সরকারি এম এল মডেল হাই স্কুল উপজেলার শিক্ষাঙ্গনে এক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ইতিহাস, শিক্ষা কার্যক্রমে ধারাবাহিক সাফল্য এবং সামাজিক অবদানের কারণে এটি শিক্ষার অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে পরিচিত। ১৮৮৮ সালের দিকে যখন এই অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ ছিল সীমিত, তখনই জেলা ও উপজেলার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত পাঠক্রম, দক্ষ শিক্ষক ও অবকাঠামোগত সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
বিদ্যালয় সূত্র ও সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এবং শিক্ষক রয়েছেন ২৮ জন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১৯৬২ সালে বিদ্যালয়ের প্রথম ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা পরবর্তী সময়ে তিনতলা ভবনে রূপ নেয়। এরপর ২০১৬ সালে সরকারি অর্থায়নে আরো একটি নতুন তিনতলা ভবন নির্মিত হয়। তবে স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত পুরোনো ভবনটির বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল, খসে পড়া পলেস্তারা এবং ক্ষয়প্রাপ্ত কাঠামো যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিন ক্লাস চলাকালীন সময়েও সবাই আতঙ্কে থাকেন। কখন দেয়াল বা ছাদের কোনো অংশ ভেঙে পড়ে, সেই শঙ্কা থেকেই যায়। তবুও বিকল্প শ্রেণিকক্ষের অভাবে বাধ্য হয়ে এই ভবনেই পাঠদান চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
দুজন অভিভাবক বলেন, প্রতিদিন সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে গিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। কখন যে ভবনের দেয়াল বা পলেস্তারা খসে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়, সেই আশঙ্কা থেকেই যায়। তবুও পড়াশোনা বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তারা দ্রুত সংস্কার অথবা নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেন। আরেক অভিভাবক আলী আজগার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে সন্তানদের পাঠাতে আমাদের খুব ভয় লাগে। সরকারের কাছে জোর দাবি, পুরোনো ভবনটি অপসারণ করে দ্রুত নতুন একটি ভবন বরাদ্দ দেওয়া হোক।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, স্কুলের পুরোনো ভবনটির বয়স প্রায় ৬২ বছর। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভবনটির অবস্থা এখন অত্যন্ত করুণ। দেয়ালের পলেস্তারা ও ছাদের অংশ পড়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এত ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করানো খুবই কষ্টকর। তিনি বলেন, ভবনটি অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে শিক্ষার পরিবেশ অনেকটাই নিরাপদ হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আজাদ বলেন, প্রতিদিন ভগ্নপ্রায় ভবনে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে থাকলেও শিক্ষকরা সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকেন। এরপরও দায়িত্ববোধ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে পাঠদান চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে পুরোনো ভবনটি অপসারণ করে একটি নতুন ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনী খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনের ভগ্নদশার বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানো হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

