আগামী ১০ দিনের মধ্যে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোর কমিটির সভা শেষে তিনি এ তথ্য জানান। উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর এবং পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তদন্তের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনই সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। জনসমক্ষে যে অংশ প্রকাশ করা সম্ভব, তা তিনি তুলে ধরেছেন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলো— মূলহোতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, গার্লফ্রেন্ড মারিয়া আক্তার লিমা, মো. কবির, নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, সিবিয়ন দিও, সঞ্জয় চিসিম, মো. আমিনুল ইসলাম রাজু এবং মো. আব্দুল হান্নান। এদের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং ৪ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছে।
হাদির হত্যাকাণ্ডে জব্দ করা উল্লেখযোগ্য আলামতে রয়েছে – দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন ও ছোরা; হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট; ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত গুলির খোসা, বুলেট, সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রায় ৫৩টি অ্যাকাউন্টের মোট ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, সাক্ষীদের জবানবন্দি এবং উদ্ধারকৃত আলামত পর্যালোচনার পর মামলাটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি আগামী ১০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে।” তিনি সকলকে ধৈর্য ধরার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং জানিয়েছেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, “এ কাজে বাধা সৃষ্টি করতে ফ্যাসিস্ট দোসর, দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীরা তৎপর। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান করছি যেন হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হয়।”
এছাড়া চলমান অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অভিযানে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯,৯৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অভিযানে ১০২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৫৩ রাউন্ড গুলি, ১৬৯ রাউন্ড কার্তুজ, ৮৯টি দেশীয় অস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টারের গোলা, গানপাউডার, আতশবাজি ও বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। মোট ২২,৩৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৬ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান আসামি মো. রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়মনসিংহে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে হত্যার ঘটনায় র্যাব ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই জেলার পুলিশ গোয়েন্দা অভিযানে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ মাদ্রাসা বিস্ফোরণের ঘটনায় র্যাব ৫-৬টি ককটেল, ১২ ড্রাম হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ৭ ড্রাম অন্যান্য কেমিক্যাল, তিনটি বই ও স্প্লিন্টার উদ্ধার করেছে। ঘটনার মূলহোতা আলামিন পলাতক রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে। শনিবার নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে আলামিনের সহযোগী আহসান উল্লাহ ওরফে হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

