স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়—
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল বিশেষ যৌথ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং পতিত বিগত সরকারের ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা। তবে বছরের শেষে এসে দেখা যাচ্ছে, বছরজুড়ে অভিযান চললেও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। বরং ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ফেজ-২ শুরু করার মধ্য দিয়েই শেষ হচ্ছে বছরটি।
বিদেশে মিশন সংস্কার: ১২ দেশে ১৫ ফার্স্ট সেক্রেটারি
বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি বৈদেশিক মিশনগুলোতেও বড় ধরনের পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইতালিসহ ১২টি দেশের ১৫টি মিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রথম সচিব) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া, আরো চারটি দেশে চারজন সেকেন্ড সেক্রেটারি নিয়োগের মাধ্যমে মিশনগুলোকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তায় নতুন ৫ ব্যাটালিয়ন আনসার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে দুই সহস্রাধিক পদ সৃষ্টি করে আনসারের পাঁচটি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। গত ২৮ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। নতুন ব্যাটালিয়নগুলো ঢাকা, বরিশাল সদর, চট্টগ্রাম, রংপুরের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা এবং কক্সবাজারের উখিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে।
তদন্ত ক্ষমতা চায় হাইওয়ে পুলিশ
মহাসড়কে দুর্ঘটনার মামলায় তদন্তের ক্ষমতা দাবি করেছে হাইওয়ে পুলিশ। বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশ মামলা করতে পারলেও তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় বলে মনে করছে সংস্থাটি। দুর্ঘটনার সঠিক প্রতিকার ও সংখ্যা কমিয়ে আনতে তদন্তের ক্ষমতা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর কঠোর নজরদারি
নির্বাচনের আগে জামিনে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব সন্ত্রাসী পুনরায় অপরাধে জড়ালে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবিসহ সব সংস্থাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কচ্ছপ গতিতে পুলিশ সংস্কার
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হলেও এর সুপারিশ বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলো জনবান্ধব পুলিশিং, জবাবদিহিতা ও মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে নেওয়া হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন চলছে কচ্ছপগতিতে। পুলিশে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন, নতুন আইন প্রণয়ন এবং কাঠামোগত পরিবর্তনে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও ঝুলে আছে। আটক বা রিমান্ডে নেওয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘেরাটোপ দেওয়া আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ (Interrogation room) রাখার সুপারিশ করেছিল কমিশন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কেবল নির্মীয়মাণ ও নতুন থানাসমূহে এ ধরনের কক্ষ স্থাপন করা হবে। পুরোনো থানায় এ ধরনের কক্ষ স্থাপনের বিষয়টি আশু বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মত দেওয়া হয়েছে।
‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ পাস
পুলিশ প্রশাসনের কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও তদারকি নিশ্চিত করতে ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ পাস করা হয়েছে। তবে, এই অধ্যাদেশের কিছু ধারা ও খসড়া নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, যা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে।

বদলি ও পদোন্নতির বছর
২০২৫ সালের পুরোটা জুড়েই ছিল পুলিশ প্রশাসনে বদলি ও পদোন্নতির মহোৎসব। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশের পুলিশ সুপার (এসপি) ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে।
খোদা বকশ চৌধুরীর নীরব প্রস্থান
বছরের শেষদিকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের জোরালো দাবি ওঠে। নানা গুঞ্জন শেষে ডিসেম্বরের শেষদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বিদায় নিতে হয় খোদা বকশ চৌধুরীকে। তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই বছরটি শেষ করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০২৫ সালে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। পুলিশ সংস্কার ও নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন, বিদেশি মিশনে পরিবর্তন এবং সন্ত্রাসীদের ওপর কঠোর নজরদারি শুরু করা হলেও কার্যকর বাস্তবায়ন ধীরগতি ধারণ করেছে। বছরের শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি ও পরিবর্তনের মাধ্যমে বছরটি শেষ হয়েছে। সূত্র: ঢাকা পোস্ট

