বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করেছে। পাশাপাশি সদস্যদের যোগ্যতা, দায়িত্ব ও কার্যবিবরণী নিয়েও বিস্তারিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের কার্যক্রমে শরীয়াহ নন-কমপ্লায়েন্স শনাক্ত হলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির গঠন, সদস্য নিয়োগ-অপসারণ এবং কর্তব্য সম্পর্কিত নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। নতুন নীতিমালা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শরীয়াহ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। যদি সুপারভাইজরি কমিটি ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা, নির্বাহী বা অডিট কমিটির মধ্যে শরীয়াহ সংক্রান্ত মতবিরোধ দেখা দেয়, কমিটি তা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, নতুন নীতিমালা ইসলামী ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং শরীয়াহসম্মত অনুশীলন আরও জোরদার করবে। ২০০৯ সালে শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি গঠনের বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল। তবে তখন সদস্য সংখ্যা, সম্মানী, মেয়াদ ও দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়নি। নতুন নীতিমালায় এসব বিস্তারিতভাবে সংযোজিত হয়েছে।
সদস্য হতে হলে প্রার্থীর স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান থেকে কামিল, দাওরা-ই-হাদিস, ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী ফাইন্যান্স, ইসলামী ব্যাংকিং বা ইসলামী আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। কোনো শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে পিএইচডি বা সমমানের উচ্চতর ডিগ্রিও বিবেচিত হবে।
সদস্যদের অন্তত দুই বছরের শিক্ষকতা, মুফতি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা অথবা ব্যাংকের শরীয়াহ কমিটিতে সম্পৃক্ততার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকিং বা অর্থনীতি বিষয়ে গবেষণা নিবন্ধ বা বই প্রকাশও যোগ্যতার মধ্যে ধরা হবে। সদস্যদের লিখিতভাবে ঘোষণা দিতে হবে যে তারা ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হননি, আর্থিক অপরাধে জড়িত নন, ঋণখেলাপি নন এবং কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা লাভজনক পদে নেই। এছাড়া ব্যাংকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্কও থাকতে পারবে না।
প্রতিটি ব্যাংকে শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটিতে ৩ থেকে ৫ জন সদস্য থাকবে। একজন সদস্য সর্বোচ্চ তিনটি ব্যাংকের কমিটিতে থাকতে পারবেন। সদস্যদের সাধারণত ৩ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে সর্বোচ্চ ৬ বছর দায়িত্ব পালন করার পর ২ বছরের বিরতি নেবে। মাসিক সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা, এবং প্রতি সভায় অংশগ্রহণের জন্য ভাতা ৮ হাজার টাকা। পরিচালনা পর্ষদ বিশেষ কারণে সদস্য অপসারণ করতে পারবে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন। একইভাবে সদস্যরা লিখিত নোটিশ দিয়ে পদত্যাগ করতে পারবেন। সদস্যদের মধ্যে একজনকে ৩ বছরের জন্য চেয়ারম্যান করা হবে। শরীয়াহ সচিবালয়ের প্রধান সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, তবে তার ভোটাধিকার থাকবে না। প্রতিটি ব্যাংকে একটি শরীয়াহ সচিবালয় বাধ্যতামূলক। সচিবালয় কমিটিকে সভার এজেন্ডা তৈরি, কার্যবিবরণী সংরক্ষণ ও মতামত প্রদানে সহায়তা করবে। এর অধীনে থাকবে অভ্যন্তরীণ শরীয়াহ অডিট ও রিভিউ বিভাগ, কমপ্লায়েন্স বিভাগ এবং গবেষণা বিভাগ।
শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি ব্যাংকের নীতি, বিধি, ম্যানুয়াল, চুক্তি, পণ্য, সেবা ও প্রচারণা শরীয়াহসম্মত কিনা যাচাই করবে। লাভ-ক্ষতি ও বিনিয়োগ হিসাবায়ন তদারকি, যাকাত হিসাব ও বণ্টন এবং ক্বারজ তহবিলের উৎস ও ব্যবহার পর্যালোচনা করাও কমিটির দায়িত্ব। নতুন পণ্য চালুর আগে ফতোয়া বা ঘোষণা প্রদান করা হবে। শরীয়াহ নীতিমালার বাইরে কোনো পণ্য চালু করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
প্রতি বছর সচিবালয় একটি অডিট পরিকল্পনা তৈরি করবে, যা কমিটি অনুমোদন করবে। ত্রৈমাসিকভাবে আপত্তি পর্যালোচনা করা হবে এবং গুরুতর অনিয়ম হলে পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করা হবে। সদস্যদের বছরে অন্তত ৭৫ শতাংশ সভায় উপস্থিত থাকতে হবে। তিনবার ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকলে পদ শূন্য বলে গণ্য হবে। এসএসসি সদস্যদের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কোনো তথ্য বা নথি বাইরে প্রকাশ করতে পারবেন না।

