ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘অবৈধ প্রক্রিয়া’য় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ছাঁটাই শুরু করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। এরই মধ্যে ২০০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। আবার মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় ৪ হাজার ৯৫৩ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি করা হয়েছে।
ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ব্যাংকটি নতুন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে ব্যাংক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই গ্রুপ ব্যাংক দখলের পর থেকে বড় অঙ্কের টাকা বের করে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর বেশির ভাগ টাকা ফেরত আসেনি।
ফলে ব্যাংকটি বড় সংকটে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৬৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকটিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা ছিল না।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পটিয়া ও এস আলমের অফিসে চাকরিপ্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের জন্য আলাদা বক্স রাখা হতো। ওই বক্সে সিভি জমা দিলেই ইসলামী ব্যাংকে চাকরি মিলত। এস আলমের গৃহকর্মী ও তাঁর স্বামীকেও উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশেও নিয়োগ হতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশেও অনেক নিয়োগ দেওয়া হয়। এস আলমের দখলের আগে ২০১৬ সালে ব্যাংকের জনবল ছিল ১৩ হাজার ৫৬৯ জন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ হাজারে। এর মধ্যে প্রায় ১১ হাজারই চট্টগ্রাম বিভাগের। শুধু পটিয়া উপজেলা থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৫২৪ জন।
ইসলামী ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁদের বড় অংশের সনদ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অনেকের সনদে জালিয়াতির প্রমাণও পাওয়া গেছে। বিজিসি ট্রাস্ট ও পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয় সনদ যাচাইয়ে সাড়া দেয়নি। নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ পাওয়া ৫ হাজার ৩৮৫ জনের যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় ব্যাংক। গত শনিবার পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এতে ৪ হাজার ৯৫৩ জন অংশ নেননি। তাঁদের ওএসডি করা হয়েছে। একই সঙ্গে চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০০ জনকে সরাসরি ছাঁটাই করা হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুই দিন ধরে বিক্ষোভ হয়। পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও জনবল নিয়ে একাধিক নিরীক্ষা চালানো হয়। তাতেই অনিয়ম ধরা পড়ে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংক নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। স্নাতক পাসরা ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) এবং স্নাতকোত্তর পাসরা ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার পদে আবেদন করতে পারবেন।
ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দীন জসীম বলেন, “নীতিমালা না মেনে নিয়োগ পাওয়া সবাইকে যাচাই করা হবে। সেবার মান ধরে রাখতে যোগ্য কর্মকর্তা দরকার। তাই নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে নিয়োগ দেওয়া হবে।”

