রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) সরকারের কাছে ৫০ হাজার কোটি টাকা অর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। ব্যাংকটির কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রমে সহায়তা করতে এই অনুদানের প্রয়োজন বলে জানা গেছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন অর্থ উপদেষ্টাকে লিখিত চিঠিতে এই অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিডিবিএল তার ব্যবসা ও পরিচালনাগত পরিকল্পনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। চিঠিতে জসিম উদ্দিন উল্লেখ করেছেন, ২০২৪ সালে পূর্ববর্তী সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্তে ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল একীভূত হওয়ার ফলে ব্যাংকটি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিল। সেই সময় বহু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমানতকারী আতঙ্কিত হয়ে তাদের আমানত তুলে নিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও তাদের লেনদেন অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করে। “গ্রাহকদের আস্থা কমে গিয়েছিল। ব্যাংকের মোট আমানত পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল,” চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।
এর ফলে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি হয় এবং কাজের আগ্রহ কমে যায়। ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, তার ফলে ব্যাংকের তরলতা সংকট গভীর হয় এবং বিনিয়োগ ও সাধারণ কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে। জসিম উদ্দিন আরো জানান, পূর্বে ব্যাংককে সরকারের অর্থিক সহায়তা নিতে হয়নি, যদিও কোভিড মহামারিসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। অর্থ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ব্যাংকের চিঠি পেয়েছি। তারা অর্থিক সহায়তা চেয়েছে।” তিনি আরও জানান, ব্যাংকের বিভিন্ন সূচক, যেমন আমানতের পরিস্থিতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারকে নগদ লভ্যাংশ হিসেবে ৬৯৫ মিলিয়ন টাকা প্রদান করেছে।
ব্যাংকের প্রদত্ত মূলধন ২০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ কোটি টাকা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঠিক নির্দেশনার ফলে ব্যাংক পূর্বের অনেক সমস্যা কাটাতে সক্ষম হয়েছে। একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের ৫১টি শাখায় গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে।” বিডিবিএল চায়, দেশের ২৮টি জেলা যেখানে কোনো শাখা বা উপশাখা নেই সেখানে অন্তত একটি করে শাখা খোলা হোক। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় শাখা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
জসিম উদ্দিন অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেছেন, যাতে ব্যাংক দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে আরও অবদান রাখতে পারে। ২০২৪ সালে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৭৫.৯ মিলিয়ন টাকা এবং পরবর্তী মুনাফা ৫৫.৮ মিলিয়ন টাকা। লসজনক শাখার সংখ্যা ২০২৩ সালের ১২টি থেকে কমে ২০২৪ সালে পাঁচটিতে নেমেছে।
ডিসেম্বর ২০২৪ অনুযায়ী ব্যাংকের মূলধন ঝুঁকি ওজনিত সম্পদ অনুপাত ছিল ২২.৩৮ শতাংশ। মূলধন সংরক্ষণ সহ প্রয়োজনীয় অনুপাত ১২.৫০ শতাংশ নির্ধারিত। মোট সম্পদ ৫৯.৮৯ বিলিয়ন টাকা এবং মোট ঋণ ও অগ্রিম ২৫.৫৫ বিলিয়ন টাকা। পূর্ববর্তী সরকারের একীভূতকরণ সিদ্ধান্তের প্রভাবেই ২০২৪ সালের শেষের দিকে ব্যাংকের আমানত উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। লিখিত ঋণের পরিমাণও ৪২.৩৭ শতাংশ কমে ১৪.১৩ বিলিয়ন টাকায় নেমেছে, যা পূর্বের ২৪.৫১ বিলিয়ন টাকার তুলনায়।

