বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাত এখনো বড় পরিসরে ভারতের প্রযুক্তিনির্ভর। বেশির ভাগ ব্যাংক “কোর ব্যাংকিং সিস্টেম”-এ ভারতীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তিনি মনে করেন, এই নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আর্থিক খাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের (ফিনএক্সেল) ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন গভর্নর। অনুষ্ঠানে তিনি বিশেষ অতিথি ছিলেন, আর প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে এখন ভালো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকারদের জন্য নানা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থাকলেও সবচেয়ে কার্যকর প্রশিক্ষণ হয় কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংক খাতে প্রশিক্ষণ ও জনবল উন্নয়নে বড় বিনিয়োগের সক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাংক খাতের সুশাসনের বড় বাধা। ব্যাংকগুলো ঝুঁকি আগেভাগে মূল্যায়ন না করে অনেক সময় একই ধরনের ব্যবসায় একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে সামগ্রিক আর্থিক স্থিতি ঝুঁকিতে পড়ে। দেশের আর্থিক খাতের আকার জিডিপির মাত্র ৫২ থেকে ৫৩ শতাংশ, যেখানে চীনে এটি ২০০ শতাংশের বেশি এবং ভারতে প্রায় ১০০ শতাংশ। বাংলাদেশের এই অবস্থান, তাঁর মতে, গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের শুধু পেশাগত নয়, নৈতিক প্রশিক্ষণও জরুরি। তাঁর ভাষায়, “প্রশিক্ষিত কিন্তু অসৎ মানুষ অনেক সময় অপ্রশিক্ষিত মানুষের চেয়েও বেশি ক্ষতি করতে পারে প্রতিষ্ঠানের ও দেশের।” তিনি আরও বলেন, আগামী তিন–চার মাস দেশের জন্য আরও চ্যালেঞ্জের সময়। “আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে যেন পরবর্তী সরকারের জন্য একটি কার্যকর পদচিহ্ন রেখে যেতে পারি। যদি নতুন সরকার সেই পদচিহ্ন অনুসরণ না করে, জনগণই তাদের রাস্তায় নামিয়ে আনবে। কারণ জনগণ এখন অনেক সচেতন।”
সালেহউদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতিনির্ধারণে কিছু ঘাটতি রয়েছে। “মাত্র ১৪ মাসে আগের সব ভুল সংশোধন সম্ভব নয়,” বলেন তিনি। তবে আগামী কয়েক মাসে কিছু মৌলিক সংস্কার কার্যকর করার আশাবাদও ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর সমাধান, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, আলোচনার কৌশল ও সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাসহ এক শতাধিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিনএক্সেলের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, ইউসিবি চেয়ারম্যান শরীফ জহির ও মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

