Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Mon, Oct 20, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • প্রযুক্তি
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » একীভূত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত কতটা সুরক্ষিত?
    ব্যাংক

    একীভূত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত কতটা সুরক্ষিত?

    কাজি হেলালOctober 6, 2025Updated:October 7, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাঁচটি দুর্বল শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ। এর লক্ষ্য হলো ভাঙনের মুখে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে টিকিয়ে রাখা এবং গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

    এই প্রক্রিয়ায় দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে প্রথমবার একসঙ্গে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। এই রূপান্তরের আগে প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক বসানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, প্রশাসকদের তালিকা ইতিমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শওকাতুল আলম এক্সিম ব্যাংক, নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, নির্বাহী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ইউনিয়ন ব্যাংক এবং টাঁকশালের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাবেন। প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসকের সঙ্গে একজন অতিরিক্ত পরিচালক, একজন যুগ্ম পরিচালক ও একজন উপপরিচালক থাকবেন।

    আইনি প্রক্রিয়া মেনে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের সভায় যুক্ত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরেই প্রশাসকেরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’

    পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের অবস্থাই যথেষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, এই ব্যাংকের লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, মূলধন ঘাটতি ৫৩ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা এবং খেলাপি ঋণ প্রায় ৯৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এমনকি কর্মীদের বেতন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে আমানতকারীদের টাকায়। ভুয়া কাগজে ঋণ অনুমোদন, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ ও তহবিল আত্মসাতের কারণে ব্যাংকটি কার্যত ধসে পড়েছে এবং এখন কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় “লাইফ সাপোর্টে” টিকে আছে।

    একই চিত্র দেখা গেছে আরও চার ব্যাংকে যেমন: ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই পাঁচ ব্যাংক বছরের পর বছর ধরে গ্রাহকের আস্থা হারিয়েছে। তাদের সম্মিলিত আমানত প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা হলেও ঋণ ছাড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বেশি, যার বড় অংশই খেলাপি। ফলে আমানত ফেরত দেওয়া ছিল এক কঠিন বাস্তবতা।

    পাঁচ ব্যাংকের এই পরিস্থিতির পেছনে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির ইতিহাস রয়েছে। ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো ভয়াবহ খেলাপিতে জর্জরিত। বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, আর ঋণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশই খেলাপি। ইউনিয়ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটিতে ৯৭, গ্লোবালে ৯৫, সোশ্যাল ইসলামীতে ৬২ দশমিক ৩ এবং এক্সিমে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ।

    এই সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে প্রয়োজন ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার ২০০ কোটি, আমানত বিমা ট্রাস্ট থেকে আসবে সাড়ে ৭ হাজার এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দেবেন আরও সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার। সরকারের সম্মতিও ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে।

    সম্পদের আকারে এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এত বিপুল খেলাপি ঋণ ও অনিয়মের বোঝা কাঁধে নিয়ে একীভূত ব্যাংকটি গ্রাহকের আমানত কতটা নিরাপদ রাখতে পারবে?
    ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘এটি ব্যাংক খাত সংস্কারের নতুন অধ্যায়। তবে চেয়ারম্যান ও এমডি পদে সঠিক নেতৃত্ব বেছে না নিলে আবারও রাজনৈতিক প্রভাবে পথচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।’

    কেন এই পদক্ষেপ?

    মূল অনুকূলতা ও কারণসমূহ:পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল করা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। দীর্ঘদিন ধরে এসব ব্যাংক ভুয়া ঋণ, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাদের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি ব্যাংকগুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া অনেক সময়ই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, পৃথকভাবে টিকিয়ে রাখার চেয়ে একীভূত করে একটি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক গঠন করাই হবে কার্যকর সমাধান।

    বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই একীভূতকরণের পর গ্রাহকের আমানত আরও সুরক্ষিত হবে। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর আইনি কাঠামোর ওপর। বিশেষত আমানতকারীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে “আমানত সুরক্ষা আইন” এবং “খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা আইন” দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। বর্তমানে এই আইনগুলো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে, যা যত দ্রুত কার্যকর করা যাবে, তত দ্রুত গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

    অন্যদিকে একীভূতকরণের মাধ্যমে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের বোঝা আলাদা করে ব্যবস্থাপনা করতে চায়, যাতে নতুন ব্যাংকটি একটি স্বচ্ছ আর্থিক কাঠামো নিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারে। এর ফলে খেলাপি ঋণের চাপ কমবে এবং নতুন প্রতিষ্ঠানকে একটি গ্রহণযোগ্য রূপ দেওয়া সহজ হবে।

    এই পদক্ষেপের পেছনে রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপও কাজ করছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গড়ে ওঠা অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার কারণে শরিয়াহভিত্তিক এই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকিং খাতকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে এবং গ্রাহকদের নানা অসন্তুষ্টির মধ্যে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

    ফলে একদিকে যেমন এটি আর্থিক খাতকে বাঁচানোর জরুরি কৌশল, অন্যদিকে একটি নতুন ও শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক গড়ে তুলে দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনারও একটি সুযোগ। তবে আমানতকারীর প্রকৃত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর নজরদারি, কার্যকর আইন প্রণয়ন এবং আমানত বীমা তহবিল গঠন করতে হবে। কেবল তাহলেই নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি আস্থা অর্জন করতে পারবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলতে সক্ষম হবে।

    গ্রাহকের আমানতে বাস্তব ঝুঁকি কোথায়?

    পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার মূল উদ্দেশ্য গ্রাহকের আমানতকে সুরক্ষিত রাখা হলেও বাস্তবে এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি রয়ে গেছে। এই ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ আমানতের চেয়ে অনেক বেশি এবং ঋণের একটি বড় অংশই খেলাপি। উদাহরণ স্বরূপ- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটির ২২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। এই ধরনের বিপুল খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটকে তীব্র করেছে, ফলে দীর্ঘদিন ধরেই তারা গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছিল।
    এই বৈষম্যের কারণে নগদ অর্থের ঘাটতি প্রকট হয়ে উঠেছে, যা আমানত ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়া অতীতে অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ ও ভুয়া ঋণ অনুমোদনের মতো ঘটনাও গ্রাহকের আস্থাকে মারাত্মকভাবে নষ্ট করেছে।

    ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এ বলা হয়েছে, ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমার আওতায় দ্রুত ফেরত দেওয়া হবে। তবে একজন গ্রাহকের একাধিক ব্যাংকে হিসাব থাকলেও মোট মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকাই বিমার সুরক্ষা পাবে। এর বেশি অঙ্কের আমানত ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে, যা নির্ভর করবে একীভূত ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ও আর্থিক শক্তির ওপর। একীভূত হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে আমানতের বিপরীতে ৪ শতাংশ হারে রিটার্ন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তবে আগের সব আমানত স্কিম বাতিল হয়ে যাবে।

    বাংলাদেশ ব্যাংক আশ্বস্ত করছে যে ব্যাংকগুলো অবসায়ন করা হচ্ছে না; বরং একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক গড়ে তোলা হচ্ছে। তাই আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা দাবি করছেন। অর্থনীতিবিদরাও মনে করেন, যদি সঠিকভাবে একীভূতকরণ সম্পন্ন হয়, তবে ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, যাতে অতীতের অনিয়ম নতুন ব্যাংকে পুনরায় ছড়িয়ে না পড়ে।

    এই প্রক্রিয়ায় একটি বড় আঘাত আসছে শেয়ারহোল্ডারদের ওপর। পাঁচটি ব্যাংকই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত, কিন্তু একীভূত হওয়ার পর এগুলো ডিলিস্ট করা হবে। ইতোমধ্যে ১০ টাকার ফেস ভ্যালুর শেয়ার নেমে গেছে ৫ টাকার নিচে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর আস্থা। একই সঙ্গে প্রায় ২১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিশ্চয়তায় আছেন, কারণ নতুন ব্যাংক গঠনের পর তাদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান কীভাবে হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

    সব মিলিয়ে, নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি সফল হলে গ্রাহকের আমানত নিরাপদ থাকবে এবং ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরবে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব কাটানো না যায়, তবে নতুন ব্যাংকও একই সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ এই একীভূতকরণের সাফল্য পুরোপুরি নির্ভর করছে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহির ওপর। সাময়িক স্বস্তি মিললেও দীর্ঘমেয়াদে এর দায় জনগণের ঘাড়ে না চাপাতে হলে এখনই কঠোর সংস্কার বাস্তবায়ন জরুরি।

    গ্রাহকের আমানত সুরক্ষায় করণীয় ও নীতিগত সুপারিশ: পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এর মূল লক্ষ্য হলো গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা ও ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল করা। তবে বাস্তবে এই প্রক্রিয়ার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে নীতি, আইন এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার ওপর। বর্তমানে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আশ্বাস দিলেও আমানত সুরক্ষার জন্য সুস্পষ্ট ও কার্যকর আইন এখনও প্রণীত হয়নি। এর ফলে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, বিশেষ করে বড় অঙ্কের আমানতকারীদের জন্য।

    প্রথমত: জরুরি ভিত্তিতে ডিপোজিট প্রোটেকশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট সীমার বাইরে থাকা বড় অঙ্কের আমানতেরও পর্যায়ক্রমিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি পুরনো ও খেলাপি ঋণের দায় নতুন ব্যাংকের ওপর না চাপিয়ে সেগুলো আলাদা করে ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। এজন্য ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (DAMA) নামের একটি আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ আলাদাভাবে পরিচালিত হলে নতুন ব্যাংক স্বচ্ছভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

    দ্বিতীয়ত: প্রযুক্তি, মানবসম্পদ ও বিনিয়োগ নীতি একীভূত করাটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। পাঁচটি ব্যাংকের আলাদা আইটি সিস্টেম, শাখা নেটওয়ার্ক ও কর্মী কাঠামোকে একটি একক কাঠামোয় আনতে না পারলে কার্যক্রম অচল হয়ে পড়তে পারে। তাই সমন্বিত ও আধুনিক আইটি সিস্টেম গড়ে তোলা, সুশৃঙ্খল মানবসম্পদ নীতি তৈরি করা এবং বিনিয়োগ নীতি পুনর্বিন্যাস করা এখন জরুরি।

    তৃতীয়ত: এই পুরো প্রক্রিয়া হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। একীভূতকরণের শুরু থেকেই গ্রাহকের আমানত রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনো ধরনের গোপনীয়তা বা অস্পষ্টতা থাকলে তা গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করবে, যা পুরো ব্যাংক খাতের জন্য ক্ষতিকর।

    এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। তারা একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং জনগণকে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করবেন। একই সঙ্গে সম্ভাব্য বাঁধা, নীতিগত দুর্বলতা ও গ্রাহকের উদ্বেগগুলো সামনে এনে নীতি-নির্ধারকদের সতর্ক করবেন। সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ ও প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে, যাতে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত হয়।

    সব মিলিয়ে এই একীভূতকরণ কেবল নতুন ব্যাংক গঠনের বিষয় নয়; বরং এটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। যদি সঠিক আইন প্রণয়ন, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়, তবে গ্রাহকের আমানত সত্যিকার অর্থে সুরক্ষিত থাকবে। অন্যথায় এই একীভূতকরণ কেবল সাময়িক সমাধান এনে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে।

    পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে তোলার পাশাপাশি গ্রাহকের আমানত সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের আশ্বাসে আমানতকারীরা কিছুটা আশ্বস্ত হলেও বাস্তব চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। খেলাপি ঋণের বোঝা, তারল্য সংকট, সুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাব, এসব যদি দূর করা না যায়, তবে নতুন ব্যাংকও আগের মতো সংকটে পড়তে পারে।

    তবে ইতিবাচক দিক হলো, একীভূত হওয়ার পর নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক মূলধন, সম্পদ ও আমানতের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকে পরিণত হবে। সঠিক নীতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে এটি ব্যাংক খাতে নতুন আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারে। পরিশেষে বলা যায়, একীভূতকরণ শুধু কাঠামোগত পরিবর্তন নয়; এটি আস্থার লড়াই। এই লড়াইয়ে জয়ী হতে হলে সরকারের সদিচ্ছা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারি এবং সর্বোপরি সুশাসনই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি। গ্রাহকের আমানত সুরক্ষিত রাখতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নতুন ব্যাংক সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    ব্যাংক

    ডিজিটাল ব্যাংকিং: হাতের মুঠোয় লেনদেনে কোটি টাকার সাশ্রয়

    October 20, 2025
    ব্যাংক

    বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৯ শতাংশ

    October 20, 2025
    ব্যাংক

    খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা

    October 20, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.