বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বিতর্কিত নেতা এস আলমের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপসারণের দাবিতে ইসলামী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারস ফোরাম মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।
আজ সোমবার রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে সারাদেশে ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শাখার সামনে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরামও একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণের আহ্বান জানান। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবে বলেও জানানো হয়।
প্রধান কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন মো. মোহতাছিম বিল্লাহ, হাফিজুর রহমান, ইমাম হোসাইন, মাহমুদুল হাসান, এটিএম সিরাজুল হক, ড. হারুনুর রশিদ, মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও মো. রতনসহ অনেকে। সমাবেশে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম, সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম, ইসলামী ব্যাংক প্রাক্তন ব্যাংকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী চাকুরী প্রত্যাশী পরিষদ, সচেতন পেশাজীবী গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংক সিবিএ এবং সচেতন ব্যাংকার সমাজ অংশ নেয়।
বক্তারা বলেন, এস আলম ২০১৭ সালে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক দখল করেন। তিনি ব্যাংকের বৈধ মালিকদের ভয় দেখিয়ে বিদায় করান এবং বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদেরও বিতাড়িত করেন। এরপর নিজের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক নিয়ে ইচ্ছামতো নিয়োগ দিয়ে বিশাল অর্থ উপার্জন করেন। তিনি পটিয়ার লোকদের নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের কর্মপরিবেশ ও গ্রাহক সেবা ধ্বংস করেছেন। বক্তারা আরও জানান, ব্যাংক মানবতার কারণে এতদিন এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে রেখেছে। এতে ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছর এসব অবৈধ কর্মকর্তার জন্য ১৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। ব্যাংক তাদের বৈধ করার জন্য যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা আয়োজন করলেও অনেকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। এটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের স্বরূপ।
তারা বলেন, অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। ৬৩টি জেলার মানুষকে বঞ্চিত করে শুধু পটিয়া ও চট্টগ্রামের লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অপসারণের মাধ্যমে ব্যাংককে মাফিয়ার হাত থেকে রক্ষা করা হবে। সমাবেশে জানানো হয়, এস আলম ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পদে ৭ হাজার ২২৪ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪৫০০ জনের বেশি শুধু পটিয়া উপজেলার। পুরনো কর্মীদের বিতাড়ন করে নিজের উপজেলায় লোক নিয়োগ দেয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো বা বরখাস্ত করা হয়েছে।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাহী জানান, ভুয়া বিনিয়োগের ফাইলে সাক্ষর না করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, মিডিয়ার সামনে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং পরবর্তীতে চাকরিচ্যুত করা হয়।
উল্লেখ্য, ব্যাংক অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন করতে ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ মাধ্যমে পরীক্ষা আয়োজন করে। ৫৩৮৫ জনকে পরীক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ৪৯৭১ জন অংশগ্রহণ করেননি, মাত্র ৪১৪ জন পরীক্ষা দেন। ব্যাংক তাদের ওএসডি করেছে এবং ৪০০ বিদ্রোহীকে চাকুরিচ্যুত করেছে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।