বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারের অংশ হিসেবে ২০২৬ সালে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগামী বছর অন্তত ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে এডিবি বাংলাদেশকে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করতে পারে। ম্যানিলাভিত্তিক এ বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ২০২৬ সালের কান্ট্রি প্রোগ্রামিং মিশন (সিপিএম) অর্থায়ন পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। জরুরি বা অগ্রাধিকারের প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত তহবিল হিসেবে ‘স্ট্যান্ডবাই ফান্ড’ও রাখা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সিপিএম গত সপ্তাহে তাদের মিশন শেষ করেছে। ইআরডির সঙ্গে বৈঠকে তারা ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে অন্তত ২.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প তহবিল প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। সিপিএম একটি বার্ষিক প্রতিবেদন, যা বাংলাদেশে এক বা একাধিক বছরের জন্য পরিকল্পিত ঋণ ও অনুদানের বিস্তারিত তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩-২০২৫ সালের ঋণ পাইপলাইন।
এডিবি পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। খাতগুলো হলো: জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন, জ্বালানি দক্ষতা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), সামাজিক সুরক্ষা এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার।
ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, দেশের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এডিবি চলমান প্রকল্পে আঞ্চলিক সংযোগ, করিডোর উন্নয়ন, অবকাঠামো, জ্বালানি, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয় অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারা ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য খাতের ডিজিটালাইজেশন, দক্ষতা উন্নয়ন ও নদী পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেও সহায়তা প্রদান করবে। তিনি আরও জানান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় এডিবি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে।
সিপিএমের পাশাপাশি সম্প্রতি ত্রিপক্ষীয় পোর্টফোলিও পর্যালোচনা সভা (টিপিআরএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এডিবি-অর্থায়নে চলমান ১৫টি প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় জানানো হয়, দরপত্র প্রক্রিয়া দ্রুত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে আরও ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প প্রস্তুতিতে আরও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। যেখানে সময় লাগে, সেগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কমিটিগুলো আরও সুবিন্যস্ত করা হচ্ছে। এডিবি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া করিডোর নিয়ে একটি গবেষণা করছে। এর মাধ্যমে করিডোর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর ব্যবহার নিশ্চিত হবে। ঋণদানকারী সংস্থা সরকারকে টাকা মূল্যের বন্ড চালু করার প্রস্তাবও দিয়েছে।
চলতি বছর পর্যন্ত সরকার এডিবির সঙ্গে ৮টি প্রকল্প চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে এসেছে। ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করবে। এ কারণে এডিবি ট্রানজিশন সহায়তায় জোর দিচ্ছে। তহবিল আঞ্চলিক সংযোগ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যবহার হবে।
২০২৬ সালের ১০টি প্রকল্পের প্রস্তাবিত তহবিল অনুযায়ী, ঢাকা-সিলেট ৪-লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৩০ কোটি ডলার, নারায়ণগঞ্জ সবুজ ও স্থিতিশীল নগর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১১৫.৮ মিলিয়ন ডলার এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে টেকসই জ্বালানি উন্নয়ন ও সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এডিবি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের প্রস্তাবিত পোর্টফোলিও একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা হিসেবে রাখা হয়েছে। কারণ দেশে বর্তমানে পঞ্চবার্ষিকী বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই। বর্তমান সিপিএস (২০২১-২০২৫) চলতি বছর শেষ হবে। পরবর্তী সিপিএস প্রণয়নের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণে এডিবির সঙ্গে আলোচনা হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কারণে বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। ইআরডি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদার এডিবি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২.৫২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং দুই বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বহুপক্ষীয় অংশীদার। বর্তমানে এডিবির পোর্টফোলিও প্রায় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ৫১টি চলমান প্রকল্প রয়েছে। ১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ ও সু-শাসন খাতে মোট ৩৩.৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৫৭১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান করেছে।

