অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কাগজের নোট ছাপে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোট দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১৪ হাজার শাখায় পৌঁছাতে সময়, ঝুঁকি ও নানা বিড়ম্বনা তৈরি হয়। কাগজের নোটে লেনদেনে সময় অপচয় ছাড়াও রয়েছে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি। এমন প্রেক্ষাপটে দৈনন্দিন জীবনে ‘ক্যাশলেস ট্রানজেকশন’ বা নগদবিহীন লেনদেন এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেছেন, নগদবিহীন লেনদেন চালু করা গেলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, অর্থ পাচার ও দুর্নীতি রোধ সম্ভব হবে। একই সঙ্গে মানুষের সামাজিক মর্যাদাও বাড়বে। তিনি এসব কথা বলেন গত বৃহস্পতিবার বগুড়ায় আয়োজিত এক সেমিনারে। ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগ’ সম্প্রসারণে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে লিড ব্যাংক হিসেবে এই সেমিনারের আয়োজন করে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)। অনুষ্ঠানটি হয় বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরিফ হোসেন খান বলেন, “আগামী দিনে বাংলাদেশে মানুষের কাছে নগদ অর্থ থাকবে না। সব লেনদেন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে।” তিনি জানান, বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যে ক্যাশলেস লেনদেনে এগিয়ে গেছে। সেই ধারায় বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যবসা-বাণিজ্য, কেনাকাটা ও দৈনন্দিন লেনদেনকে নগদবিহীন করতে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, “ক্যাশলেস ট্রানজেকশন দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনবে। ইতিমধ্যে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে বাংলা কিউআর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশের সুপারশপ ও অভিজাত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নগদবিহীন কেনাকাটা চালু হয়েছে।”
আরিফ হোসেন খান জানান, অদূর ভবিষ্যতে বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, এমনকি গণপরিবহনের ভাড়াও ক্যাশলেস লেনদেনে পরিশোধ করা যাবে। তবে মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সময় লাগবে। তিনি বলেন, “মানুষের মানসিক পরিবর্তন ঘটলেই ক্যাশলেস ট্রানজেকশন নিশ্চিত হবে। এতে নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থাকবে না, প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই টাকা স্থানান্তর করা যাবে।”
বিশ্বের উদাহরণ তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, “চীনে ৯৫ শতাংশ, ভারতে ৬০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ৯৫ শতাংশ এবং ব্রাজিলে ৯০ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস উপায়ে সম্পন্ন হয়।” তিনি যোগ করেন, “বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে বাংলাদেশকেও সর্বত্র নগদবিহীন লেনদেন চালু করতে হবে। এতে রাজস্ব আয় বাড়বে, অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক রাফেজা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক হোসনে-আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া শাখার নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সরদার আল এমরান এবং এমটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে বগুড়ার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও গ্রাহকেরা অংশ নেন। পুরো আয়োজন সমন্বয় করেন এমটিবি বগুড়া জলেশ্বরীতলা শাখার ব্যবস্থাপক সামিউল ইসলাম।