বিগত সরকারের আমলে দেশের ব্যাংক খাত সুশাসনের অভাবে গভীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে ব্যাংক খাতকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বিষয়টি বিশদে আলোচনা করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব এরিয়া স্টাডিজ ডিগ্রি লাভের পাশাপাশি সেখানকার সেন্টার ফর সাউথ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
ড. মোয়াজ্জেমের গবেষণা মূলত অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের ওপর কেন্দ্রীভূত, বিশেষ করে শিল্পনীতি, আর্থিক খাত ও টেকসই উন্নয়ন। সম্প্রতি তিনি ব্যাংক একীভূতকরণ, ব্যাংক খাতের সামগ্রিক চিত্র এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সরকারের করণীয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধার শুধু আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বরং দেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য। সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং কার্যকর নীতি ছাড়া ব্যাংক খাতের স্বাভাবিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেসব উদ্যোগের আলোকে বর্তমানে এ খাতের পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?
বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক খাতের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সুশাসনের অভাব। সেই পরিস্থিতি থেকে ব্যাংক খাতের আশু পুনরুদ্ধার খুব জরুরি ছিল। সেটির আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগের এ সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োপযোগী ছিল। কেননা ড. মনসুরের ব্যাংক এবং আর্থিক খাত নিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে অভ্যুত্থান-পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়াটা যথাযথ হয়েছে। তিনি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছেন।
দেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় ৬২টি কোনোভাবেই প্রয়োজন নেই। একটি ছোট কিন্তু বিকাশমান অর্থনীতি স্বল্পসংখ্যক ব্যাংক দিয়েই সেবা দিতে পারে—শাখা বাড়িয়ে ও ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে। কিন্তু আগের সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছিল। অবশ্য, এ অভিযোগ কেবল ওই সরকারের বিরুদ্ধে নয়; অতীতের অন্যান্য সরকারও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনেক ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে। ফলে ব্যাংক খাত একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে বিশেষায়িত পুঁজি ও দক্ষতা নয়, বরং গোষ্ঠীস্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে।
যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়, তখন দেখা যায়—ব্যাংকের পরিচালকরা নিজেদের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ নেন। যে কারণে দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। কাগজে-কলমে বলা হচ্ছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ২-৩ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু বারবার রিশিডিউল করা ঋণগুলোসহ হিসাব করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মূল পুঁজির বড় অংশই আসলে দূষিত বা ফেরতযোগ্য নয়। এমন জায়গা থেকে পুনরুদ্ধার কোনোভাবেই সহজ কাজ নয়।
সে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে, ড. মনসুর বেশকিছু সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ব্যাংক পরিচালকদের অপসারণ, স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ—এসব পদক্ষেপের কারণে ব্যাংক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরছে। আগে দেখা যাচ্ছিল মানুষ ব্যাংকের ওপর আস্থা হারিয়ে নগদ টাকা হাতে রাখতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে সেই প্রবণতা বদলাচ্ছে। যদিও বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়ে গেছে, তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজ অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাতের পুরোপুরি পুনরুদ্ধার সম্ভব।
প্রশ্ন: সম্প্রতি পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগকে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে দেখা যেতে পারে। আমার মতে, বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক বন্ধ করে দেয়াই বাস্তবসম্মত হতো। কারণ অনেক ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি ও মূলধন কাঠামো এত দুর্বল যে পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সরকার আপাতত সরাসরি বন্ধ না করে ব্যাংক একীভূতকরণের পথে হেঁটেছে। এ প্রক্রিয়ার জন্য সরকার ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এটি পরীক্ষামূলক উদ্যোগ হিসেবে দেখা উচিত। যদি আগামী এক বছরের মধ্যে এসব ব্যাংক ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্যাংক একীভূতকরণের পথ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করলে কি কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব?
এটা অনেকটা নির্ভর করবে দুর্বলতার কারণের ওপর। যদি কোনো ব্যাংক অর্থনৈতিক কারণে দুর্বল হয়, তাহলে মার্জারের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার সম্ভব। কিন্তু যদি সুশাসনের ঘাটতি, অনিয়ম বা পরিচালনা পর্ষদের দুর্নীতি এর মূল কারণ হয়, তাহলে কোনো শক্তিশালী ব্যাংকই সেটিকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। আগের সরকারের সময় যেমন এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক মার্জের উদ্যোগ ছিল—সেটি রাজনৈতিক চাপের ফল ছিল। এখনকার উদ্যোগ ভিন্ন। এখানে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাঠামোগত ও সুশাসনগত সংস্কার আনার চেষ্টা হচ্ছে। যদি সেগুলো সফল হয়, তাহলে এটিই ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ হতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত থাকলে পুনরুদ্ধারের পথ খুলে যাবে। মার্জার প্রক্রিয়া সফল হলে আগামীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে, যা এ খাতকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: কিন্তু আমাদের দেশে নীতি ধারাবাহিকতার অভাব একটি বড় সমস্যা। এক সরকারের সময়ে কোনো চুক্তি বা সংস্কার উদ্যোগ নেয়া হলে, পরবর্তী সরকার এসে সেটি স্থগিত করে দেয়। সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আপনি সরকারকে কী পরামর্শ দেবেন?
নীতি ধারাবাহিকতার অভাব নিঃসন্দেহে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের পর যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাদের ওপর অনেক পপুলিস্ট সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রেসার থাকবে। সেই চাপে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় বা অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। আমরা এরই মধ্যে দেখেছি, ব্যাংক খাতে এ ধরনের কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যেমন ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ। আমাদের ধারণা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সুবিধা দেয়ার জন্য এ সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রস্তাব থাকবে—অন্তর্বর্তী সরকার যেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে নীতি সিদ্ধান্তগুলোর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলোও যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংক খাতের সংস্কার সম্পর্কে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয় ও এটি গুরুত্বপূর্ণও।
আরেকটি বিষয় হলো—আগামী সংসদে বিরোধী দলের এমপিদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান করার যে পরিকল্পনা আছে, তা ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা যেন এসব নীতিগত সিদ্ধান্ত মনিটর করেন ও প্রয়োগে সরকারকে দায়বদ্ধ রাখেন। সবশেষে, আমি আশা করব—নির্বাচনের পর সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর যেন তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেন। এটি আমরা নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে অন্তত ন্যূনতমভাবে প্রত্যাশা করব। এটি নীতি ধারাবাহিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হবে।
প্রশ্ন: সরকার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ফরেনসিক অডিটের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। অথচ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোয়ও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের কী করণীয় হতে পারত?
এটা ঠিক যে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোয়ও অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। তবে যদি ঋণের কাঠামো দেখি, বেসরকারি ব্যাংকগুলোই মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি দিয়েছে। তাই প্রাধান্য দিয়ে তাদের দিয়েই ফরেনসিক অডিট শুরু করাটা যৌক্তিক। তবে এর অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর অডিট প্রয়োজন নেই। আমি বলব—স্যাম্পল ভিত্তিতে অন্তত কিছু রাষ্ট্রীয় ব্যাংকেও এমন অডিট শুরু করা উচিত, বিশেষ করে যেখানে বড় ঋণ বা বড় গ্রুপের সঙ্গে জটিলতা রয়েছে।
প্রশ্ন: দেখা গেছে অনেকে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে যে জমি রাখা হয়, তার কাগজপত্র ভুয়া বা বিতর্কিত। অনেক জমিই খাসজমি বা মামলাঘটিত। পৃথিবীর অনেক দেশ এ ধরনের জামানতনির্ভর ব্যবস্থার বাইরে চলে এসেছে। আমাদের ক্ষেত্রেও কি এ বিষয়ে নতুন উদ্যোগ নেয়া দরকার?
বন্ধকি জমিসংক্রান্ত অনিয়ম ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা। তবে এটি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা কঠিন, কারণ এতে আইনি প্রক্রিয়া জড়িত। আমাদের দেশে বন্ধকি সম্পদের মূল্যের ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের স্বচ্ছ ধারণা নেই; ফলে অনেক সময় তিন গুণ পর্যন্ত মূল্য দেখিয়ে ঋণ নেয়া হয়। এর সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা ও বড় ঋণগ্রহীতাদের যোগসাজশও থাকে। তাই এখানে আইনি সংস্কার দরকার—যাতে ঘোষিত মূল্য ও বাজারমূল্যের পার্থক্য কমানো যায় এবং অতিমূল্যায়িত জামানত দেখিয়ে কেউ যেন সুবিধা নিতে না পারে। তবে সবচেয়ে আগে দরকার ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা—ডিপোজিটর ও ঋণগ্রহীতা উভয়ের মধ্যে। তারপর ধীরে ধীরে কাঠামোগত সংস্কারে যাওয়া উচিত। এসব কাজ শুরু করা যেতে পারে এখনই, কিন্তু সম্পূর্ণ ফলাফল পেতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে ১০ বছর।
প্রশ্ন: বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংক খাতের দুটি বড় সমস্যা—খেলাপি ঋণ ও সুশাসনের ঘাটতি। আগামী সরকারের রোডম্যাপে কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকারে আসা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
প্রথমত, আমরা চাই না নতুন কোনো ব্যাংক নতুন সরকার এসে অনুমোদন দিক। বরং বিদ্যমান ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা উচিত। দ্বিতীয়ত, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় যে জায়গাগুলোয় সুশাসন ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যেমন বোর্ডের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলো পরিবর্তন করে আবার যাতে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিযুক্ত না করা হয়। এছাড়া ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অবশ্যই ঋণের শর্তগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেটি আমরা দেখতে চাই। একই সঙ্গে আর্থিক বা ব্যাংক খাতে নতুন সরকার যাদেরকে নিযুক্ত করবেন তারা যেন আসলেই এ খাত সম্পর্কে অভিজ্ঞ, দক্ষ হন। নিয়োগের ক্ষেত্রে যাতে আমলা বা রাজনৈতিক প্রভাবান্বিত ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেয়া না হয়—সেই প্রত্যাশা থাকবে। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর এটিই হবে প্রধান পূর্বশর্ত। সূত্র: বনিক বার্তা