আজ (শনিবার) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইসলামী ব্যাংকের বরখাস্ত কর্মকর্তা এস এম এমদাদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ব্যাংকে কর্মরত প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ব্যাংক হিসাবও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের অপরাধ কী? আমরা ব্যাংককে এগিয়ে নিয়ে গেছি। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য চাকরি হারিয়ে পুরো পরিবার দিশেহারা। কেউ কারও কাছে হাত পাততে পারছে না, কেউ কাউকে বোঝাতে পারছে না। কারও মা অসুস্থ, কারও সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম।”
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা ব্যাংকের ২০১৬ ও ২০২৩ সালের আর্থিক রিপোর্ট তুলে ধরেন। ২০১৬ সালে ব্যাংকের মোট শাখা ছিল ৩১৮টি। ডিপোজিট ছিল ৬ লাখ ৮১ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন টাকা। ইনভেস্টমেন্ট ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৮ মিলিয়ন, ইমপোর্ট ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪৭ মিলিয়ন এবং এক্সপোর্ট ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ মিলিয়ন টাকা। রেমিট্যান্স ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৪ মিলিয়ন এবং অপারেটিং প্রফিট ছিল ৪ হাজার ৪৬৫ মিলিয়ন টাকা।
পক্ষান্তরে ২০২৩ সালে শাখা বেড়ে ৩৯৪টি, উপশাখা ২৩৭টি। ডিপোজিট দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৬ মিলিয়ন, ইনভেস্টমেন্ট ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৩০৪ মিলিয়ন। ইমপোর্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯ মিলিয়ন, এক্সপোর্ট ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১২২ মিলিয়ন। রেমিট্যান্স ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৬ মিলিয়ন এবং অপারেটিং প্রফিট ২২ হাজার ৬১৪ মিলিয়ন টাকা।
এই তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকেই স্পষ্ট যে, কর্মীবাহিনী তাদের দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যাংকের সামগ্রিক ব্যবসা প্রসারিত করেছে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে তারা আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার হয়ে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছরে ব্যাংকের ব্যবসা যতটা প্রসারিত হয়েছিল, তার তুলনায় ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মাত্র ৭ বছরে সব ক্যাটাগরিতে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, কর্মীবাহিনী ছিল সুদক্ষ ও পরিশ্রমী।
এস এম এমদাদুল ইসলাম বলেন, “ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনও কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, কিন্তু আর পারছি না। আমরা ব্যাংককে ধ্বংস করতে চাই না। বাঁচার জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।”
ঘটনার শুরু সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ‘দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা’ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কর্মকর্তারা দাবি করেন, এটি কোনও যাচাই পরীক্ষা নয়। এটি নতুন নিয়োগ পরীক্ষা আড়াল করে পুরনো কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার ফাঁদ। প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা পরীক্ষা বর্জন করেন। এরপরই শুরু হয় বরখাস্ত ও টার্মিনেশন নোটিশ জারি।
চৌধুরীহাট শাখার তানজিনা আফরোজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি নোটিশে লেখা ছিল ‘নিয়োগ পরীক্ষা’। আমরা তো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমেই এই চাকরি পেয়েছি। তাই সবাই মিলে পরীক্ষা বর্জন করেছি।”