রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এমন অবস্থায় মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরাসরি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল (মঙ্গলবার) মাল্টিপল প্রাইস অকশন (এমপিএ) পদ্ধতিতে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩ কোটি ৮০ লাখ) কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ডলারের বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলার ১২১ টাকা ৮০ পয়সা। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২১২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার (২.১২ বিলিয়ন) কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি থেকে ডলারের জোগান বেড়েছে, বিপরীতে আমদানি কমে যাওয়ায় চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এতে ডলারের দাম কিছুটা নিচের দিকে যায়। এ অবস্থায় ডলারের দর বেশি পড়ে গেলে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি খাতে উৎসাহ কমে যেতে পারে। তাই ডলারের দাম নির্দিষ্ট সীমার নিচে নামতে না দেওয়ার লক্ষ্যেই বাজারে হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে—কখনো ডলার বিক্রি করে, আবার কখনো কিনে। পূর্বে রিজার্ভে চাপ সামলাতে বড় অঙ্কের ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে ডলার কেনার মাধ্যমে রিজার্ভ শক্তিশালী করার পথে হাঁটছে তারা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিএ পদ্ধতিতে ডলার কেনাবেচা ব্যাংকগুলোর জন্য স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে। তবে তারা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে হলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়াতে হবে এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি ও রিজার্ভের চাপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত এখন বাজারে বড় প্রভাব ফেলছে। তাই সময়োপযোগী এই হস্তক্ষেপ ডলারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ৯ অক্টোবরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম–৬ অনুযায়ী এ রিজার্ভ ২৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৭৫৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার (৭.৫৮ বিলিয়ন), যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৯২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬৫৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।