করোনাকালীন সময়ে হুন্ডির কার্যক্রম কমায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ পৌঁছায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। তবে এই ঊর্ধ্বগতি স্থায়ী হয়নি, দুই বছরের মধ্যে তা অর্ধেকে নেমে আসে।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আবারও রিজার্ভ বাড়তে শুরু করে। রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স, রফতানি আয় এবং বিদেশি ঋণের মাধ্যমে গতকাল (মঙ্গলবার) দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২.০২ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, “আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রবাসীরা নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছে, রফতানি আয়ও বাড়ছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভ উপরের দিকে যাচ্ছে। একটি দেশের অর্থনীতি তখন সক্ষম বলে ধরা হয় যখন তিন মাসের আমদানি বিল পরিশোধের মতো অর্থ থাকে। সেই দিক থেকে আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক হলেও তা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং। চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় আগের মতো প্রবৃদ্ধি নাও পেতে পারে। আমদানির চাপ বেড়ে গেলে রিজার্ভে প্রভাব পড়তে পারে। তাই তারা পরামর্শ দেন, রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে এবং বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়রেক্টরেটের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রেমিট্যান্স ও রফতানির প্রবণতাকে ইতিবাচক রাখা জরুরি। ঋণ দ্রুত ব্যবহার করা এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আনা প্রয়োজন। কারণ, সামনে দুই ধরনের চাপ বাড়বে—একটা হলো আমদানির চাপ, আর দ্বিতীয় ঋণ পরিশোধের চাপ। এই চাপ সামাল দিতে হলে আয়ের নতুন উৎস দ্রুত বাড়ানো প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আকু পেমেন্ট ও বৈদেশিক ঋণের চাপ থাকলেও বড় ধরনের সমস্যা নেই। তাই রিজার্ভে বড় পতনের শঙ্কা নেই। মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশে ব্যাংক সরাসরি আমদানি ফান্ডিং করে না। শুধুমাত্র সরকারের কিছু আমদানির ক্ষেত্রে অথবা গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্য আমদানিতে সীমিত পেমেন্ট করা হয়। বাকি আমদানির জন্য ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেন এবং প্রবাসীদের অর্থ ব্যবহার করে অর্থপরিশোধ করতে পারবে। তাই চ্যালেঞ্জ বড় নয়।” বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ানো এবং অর্থপাচার রোধে সরকারের কঠোর অবস্থান বজায় রাখা উচিত।