সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নয়া সিদ্ধান্তে নয়টি দুর্বল ব্যাংক ও বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি সমস্যা জর্জরিত পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংক চালুর অনুমোদন দিয়েছে। এ উদ্যোগকে দেশের আর্থিক খাতের জন্য বড় ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দেশের আর্থিক খাত দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতির বেড়াজালে আটকে আছে। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের পদক্ষেপ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে ছোট বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের ভাগ্য নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করা সাধারণ মানুষ এখন উদ্বেগে। বিশেষ করে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ৫৫০ কোটি শেয়ার, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হলে শেয়ারগুলো কার্যত মূল্যহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বন্ধ হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক আর্থিক সংকটে রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে বিতরণকৃত ঋণের আদায় ব্যর্থতা, মূলধন ঘাটতি, দায় বৃদ্ধি এবং নিয়মিত আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এই পরিস্থিতিতে সম্পদ বিক্রি করেও শেয়ারহোল্ডারদের টাকা ফেরার সম্ভাবনা কম।
একই সময়ে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো সুখবর নেই। অনেক বিনিয়োগকারী আশা করছেন, নতুন সম্মিলিত ব্যাংকে তাদের শেয়ার দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রত্যেক ব্যাংকের নিট সম্পদ ঋণাত্মক। প্রতি শেয়ারের ক্ষতি -৭৫ থেকে -৪৩৮ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ সম্পদের তুলনায় দায় অনেক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, “একীভূত প্রক্রিয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। তবে আইনি কাঠামো অনুযায়ী খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। নিট সম্পদ ঋণাত্মক থাকায় শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে নতুন শেয়ার পাওয়ার সম্ভাবনা সীমিত।”
সরকার নতুন পুঁজি ঢালছে যাতে আমানতকারীদের আস্থা বজায় থাকে। তবে এটি শুধুমাত্র সরকারের নামে নতুন শেয়ার ইস্যুর জন্য, বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দিতে নয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “সব ব্যাংকের নিট সম্পদ ঋণাত্মক। শেয়ারহোল্ডারদের কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি কঠিন শিক্ষা। বিনিয়োগের আগে প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব যাচাই করা জরুরি।”
তবুও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন না। উদাহরণস্বরূপ, ফ্যামিলিটেক্স বিডির শেয়ার দাম বৃহস্পতিবার ৬ শতাংশ বেড়ে ডিএসইর তৃতীয় সর্বোচ্চ গেইনার হয়েছে। তিনি বলেন, “দুর্বল কোম্পানির পেছনে বিনিয়োগ এখন সাধারণ ঘটনা। শেয়ারবাজারে টাকা বিনিয়োগের আগে কোম্পানির পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না হলে বিনিয়োগকারী বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।”