স্মার্টফোনের প্রসার ব্যাংক শাখার প্রথাগত গুরুত্বকে বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং এখন চুপচাপ এক ডিজিটাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সিটি টাচ, আস্থা, নেক্সাসপে, স্কাইব্যাংকিংসহ বিভিন্ন অ্যাপ সাধারণ মানুষের হাতে ব্যাংকিং সেবা নিয়ে এসেছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের হাইলাইটস:
- সিটি টাচ (সিটি ব্যাংক): ৮.৮২ লাখ ব্যবহারকারী, দৈনিক লেনদেন ৪০০ কোটি টাকা, মাসিক কর্মচারী খরচে সাশ্রয় ২০ কোটি টাকা।
- আস্থা (ব্র্যাক ব্যাংক): ১১ লাখ ব্যবহারকারী, মাসিক লেনদেন ২০,০০০ কোটি টাকা; গত বছরে ৩ লাখ নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত।
- নেক্সাসপে (ডাচ-বাংলা ব্যাংক): ব্যবহারকারী ৭০ লাখ, মাসিক লেনদেন ২১,০০০ কোটি টাকার বেশি।
- স্কাইব্যাংকিং (ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড): ব্যবহারকারী ৪.৫ লাখ, দৈনিক লেনদেন ১২০ কোটি; গত পাঁচ বছরে ব্যবহারকারী ৪৩৭% বৃদ্ধি, লেনদেন ৭৭৫%, মোট লেনদেন মান ২,৬৯৫% বৃদ্ধি। অ্যাপগুলো এখন সম্পূর্ণ ব্যাংকিং সেবা দেয় এবং প্রধান ব্যবহারকারী ২১–৩৫ বছর বয়সী তরুণরা।
রাকিবুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক বলেন, “শেষবার ব্যাংক শাখায় কবে গিয়েছিলাম মনে পড়ে না। মনে হয় ২০১৩ সালের আগে।” ২০১৩ সালে তিনি সিটি টাচ ডাউনলোড করেছিলেন। তারপর থেকে আর শাখায় যাওয়া লাগেনি। বিল পরিশোধ, ভাড়া, লোন, স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স সার্টিফিকেট বা মোবাইল রিচার্জ—সবকিছুই কয়েকটি ট্যাপেই করা যায়।
সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ অ্যাপ দৈনিক ১.১০ লাখ ব্যবহারকারীর কাজ করে। ম্যানুয়ালি এটি করলে প্রয়োজন হতো ২৫,০০০ মান-ঘন্টা বা প্রায় ৩,০০০ কর্মচারীর শ্রম। মাসিক গড় স্টাফ খরচ ধরা হলে, ডিজিটাল রূপান্তর প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় করছে। ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা অ্যাপ প্রতিদিন ১.৫–২ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংক সূত্র বলছে, এটি বছরে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করছে। এবং অন্যান্য প্রযুক্তি সচেতন ব্যাংকও ডিজিটাল গ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে বড় অংকের সাশ্রয় করছে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং অ্যাপগুলো এখন শুধু ব্যালান্স চেক করার মাধ্যম নয়।
- এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাত্ক্ষণিক ফান্ড ট্রান্সফার,
- মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ,নগদ,রকেট) টাকা পাঠানো,
- ইউটিলিটি বিল, স্কুল ফি, ক্রেডিট কার্ড ও ই-কমার্স পেমেন্,
- নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা ও পরিচালনা, লোন বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের আবেদন,
- স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স সার্টিফিকেট ও সুদের সার্টিফিকেট ডাউনলোড,
- ডিপিএস/এফডিআর খোলা, QR পেমেন্ট, কার্ডবিহীন এটিএম নগদ উত্তোলন।
ডিজিটাল ব্যাংকিং মূলত তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়। আস্থা অ্যাপের ৫৩% ব্যবহারকারী ২১–৩৫ বছর বয়সী। সিটি টাচ ব্যবহারকারীর ৫০% ২৫–৪০ বছর বয়সী। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অ্যাপ ব্যাংকিং সময়, সুবিধা ও নিয়ন্ত্রণের প্রতীক।
সীমাবদ্ধতাও আছে: কিছু সীমাবদ্ধতা এখনও রয়েছে।
- ব্যাংক-টু-ব্যাংক ট্রান্সফারের জন্য চুক্তিপত্র ও ইনভয়েস দেখাতে হয়।
- ৫০,০০০ টাকা লোনের জন্যও ওয়েট সিগনেচার বাধ্যতামূলক।
- মাসিক লেনদেন সীমা ১ লাখ, যেখানে এমএফএস এর ক্ষেত্রে নগদ ইন ৩ লাখ, নগদ আউট ২ লাখ এবং পি টু পি ৩ লক্ষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “ব্যাংক চাইলে সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। আমরা যেকোনো প্রস্তাব বিবেচনা করব যাতে ডিজিটাল ব্যাংকিং আরও কার্যকর হয়।” বাংলাদেশে ব্যাংকিং এখন হাতের মুঠোয়, সময় বাঁচাচ্ছে, আর নতুন প্রজন্মকে ক্ষমতাশালী করছে। ডিজিটাল অ্যাপগুলো শুধু সুবিধা নয়, এগুলো এখন আর্থিক জীবনধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।