শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের কার্যক্রমে ইসলামি আইন-কানুনের পূর্ণ অনুসরণ নিশ্চিত করতে শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি বোর্ড (এসএবি) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যেই ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি বোর্ডের (এসএবি) গঠন, সদস্য নিয়োগ-অপসারণ ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা–২০২৫’ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে।
বিশ্বের অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমন পর্ষদ থাকলেও বাংলাদেশে এতদিন তা ছিল না। অথচ দেশে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইসলামি ব্যাংকিং খাতে জনগণের সম্পৃক্ততা দ্রুত বাড়ছে। তাই শরিয়াহ মানদণ্ড, অডিট, গভর্ন্যান্স এবং তারল্য ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে নীতিনির্ধারণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ জন্য ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বোর্ড (আইএফএসবি) ও আন্তর্জাতিক অডিটিং সংস্থা এএওআইএফআইয়ের মানদণ্ড অনুসরণে শক্তিশালী এসএবি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসলামি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শরিয়াহভিত্তিক অর্থ–শিল্প সম্পর্কিত সন্দেহযুক্ত বিষয় নিষ্পত্তি, শরিয়াহ মানদণ্ড নির্ধারণ, নতুন পণ্যের শরিয়াহ যাচাই ও রেজল্যুশন প্রদানে এই বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুযায়ী ইসলামি ব্যাংকের রেজল্যুশন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড গঠন করতে পারবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দেশের স্বনামধন্য শরিয়াহ স্কলার ও ইসলামি শিক্ষাবিদদের নিয়ে সাত সদস্যের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এসএবি গঠন করবেন। এর মধ্যে অন্তত পাঁচজন হবেন শরিয়াহ স্কলার। বোর্ডের সদস্যরা সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। মেয়াদ শেষে কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পুনর্নিয়োগের সুযোগ থাকবে। তবে কেউ টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করলে তাকে দুই বছর বিরতি না নিয়ে পুনর্নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
বর্তমানে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক ছাড়াও ৩১টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং শাখা বা উইন্ডোর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের ১১ হাজার ৩৭২টি শাখার মধ্যে ১ হাজার ৬৯৯টি ছিল পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের। এছাড়া ৪১টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও ৯০৫টি ইসলামি উইন্ডোর মাধ্যমেও সেবা দেওয়া হচ্ছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, এসএবির সদস্য হতে হলে দাওরায়ে হাদিস, কামিল, ইসলামি অর্থনীতি, ফিকাহ, ইসলামি ব্যাংকিং বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি থাকতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা বা ফতোয়া বোর্ডে অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতা এবং ইসলামি ফাইন্যান্স বিষয়ে গবেষণা নিবন্ধ বা বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

